নিজস্ব প্রতিবেদক: নামের প্রথমাংশের মিল থাকায় নিরাপরাধ রবিউলকে গ্রেপ্তার করে করাগারে পাঠানো হয়েছে। ছয় লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে বাগেরহাটের প্রদীপন মানবিক উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) দায়েরকৃত মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামির পরিবর্তে ভিন্ন নাম, বাবার নাম ও ঠিকানার এস,এম রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাতক্ষীরা সদর আওতাধীন শহরের কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাকে সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরের নিজ বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে। নিরাপরাধ রবিউল ইসলাম সেই থেকে ধরে কারাভোগ করছেন।
মামলা বাদি প্রদীপন মানবিক উন্নয়ন সংস্থার বাগেরহাটের তৎকালিন আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী আরজিতে উল্লেখ করেন, বাগেরহাট জেলার চিতলমারি ও মোল্ল্যারহাট উপজেলার সংস্থার শাখা ব্যবস্থাপক সাতক্ষীরা শহরের কাছারিপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও খুলনার বানরগাতির হাজী ইসমাইল রোডের ভাড়াটিয়া ডা. আনোয়ারুল হকের ছেলে রবিউল হক ছয় লাখ ২৩ হাজার টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যায়। তাকে সংস্থার পক্ষ থেকে বার বার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হলেও তিনি টাকা ফেরত দেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি প্রদীপন মানবিক উন্নয়ন সংস্থার পক্ষে টাকা আদায়ের জন্য ২০১০ সালের ১৮ মে (সিআর-৭৯/১০) বাগেরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেল আদালতে মামলা করেন। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আদালত আসামি রবিউল হককে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ২০১৮ সালের ১ মার্চ রবিউল হকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত রবিউল ইসলামের ভাই রুহুল আমিনের অভিযোগ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি সাতক্ষীরা শহরের রবিউল হককে কাছারিপাড়ায় খুঁজে না পেয়ে তার ভাই এসএম রবিউল ইসলামকে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শহরের কেবি সড়কের মুনজিতপুর এলাকার তাদের বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করেন কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন। গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসএম রবিউল ইসলাম বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
তিনি বলেন, তার বাবা নাম ডা. আমানুল্লাহ, ভাইয়ের নাম রবিউল ইসলাম, ঠিকানা সাতক্ষীরা শহরের কেবি সড়কের মুনজিতপুর এলাকায়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সঙ্গে তার ভাইয়ের নাম, বাবার নাম ও ঠিকানা কোনো কিছুর মিল নেই। তার পরও উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন বলেন তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন রবিউল ইসলামই রবিউল হক । জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদপত্র, পৌরসভার পানির বিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্রা তাকে দেখানোর পর ওই পুলিশ কর্মকর্তা তার ভাই এসএম রবিউল ইসলামকে রবিউল হক বলে পরেরদিন ১১ ডিসেম্বর আদালতের মাধ্যমে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠান। একইদিন সাতক্ষীরা থেকে তাকে বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তারভাইকে হয়রানিমূলক গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে তিনি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করবেন।
মামলা বাদি প্রদীপন মানবিক উন্নয়ন সংস্থার বর্তমানে খুলনার কর্মকর্তা ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী জানান, রবিউল হকের গায়ের রং পরিস্কার, লম্বা ও তার চেহারা।
জানতে চাইলে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক বলেন, সোর্সের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই এলাকার রবিউল বলে আরও কাউকে পাওয়া যায়নি।
একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গেলে ভুল হয়। আমরা তাকে জেলখানা থেকে বের করার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরার কোর্ট ইন্সেপেক্টরের মাধ্যমে বাগেরহাটের কোর্ট ইন্সেপেক্টরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে জজ কোর্ট বন্ধ থানায় তাকে খালাস করা যাচ্ছে না। ছুটি শেষ হলে তাকে খালাস করানো হবে।’
পূর্ববর্তী পোস্ট