দেশের খবর: ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে পাকিস্তানে দীর্ঘ কারাবাস শেষে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর বছরটিতে এবারের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে ইতোমধ্যে ২০২০-২০২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছরের ১৭ মার্চ থেকে বছরব্যাপী সারাদেশে চলবে ‘মুজিববর্ষের’ বর্ণাঢ্য আয়োজনমালা। আর জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে তার জন্মশতবার্ষিকীর ‘ক্ষণগণনা’ (কাউন্টডাউন) শুরুর দিন হিসেবে। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনা কার্যক্রমের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এ মহান নেতার অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তারা।
বাঙালি জাতির মহান মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর স্ব্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালে নয় মাসের সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। জাতির পিতা নিজেই তার এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ (এ জার্নি ফ্রম ডার্কনেস টু লাইট) হিসেবে।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নে লাখ লাখ নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা চালায়। এ প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই শুরুর ডাক দেন।
স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর দখলদার পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটকে রাখে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আর অবরুদ্ধ বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছে, ঠিক তখন পশ্চিম পাকিস্তানে প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। কারাগারের যে সেলে তাকে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের পাশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়।
এদিকে, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাকেই রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে খ্যাত এ সরকারের নেতৃত্বে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র সে যুদ্ধে বহু ত্যাগ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর জাতি বিজয়ের লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।
এর আগে থেকেই কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী প্রবল জনমত গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা লাভের পর নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে তার নেতার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানালে বিশ্বনেতারাও সোচ্চার হন। অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দেয়। ১০ জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে প্রিয় স্বদেশে ফিরে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালি। দিনটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন আজ শুক্রবার নানা কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকেল ৩টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ক্ষণগণনা কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণ। সারাদেশে দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও নানা কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়া বিভিন্নম্ন সংগঠন পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আয়োজিত সব কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সব সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।