দেশের খবর: জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বর সেবাটি চালুর পর থেকেই সারাদেশের মানুষ উপকার পাচ্ছেন। ফায়ার সার্ভিস সুবিধা ছাড়াও, মানসিক অবসাদগ্রস্ত আত্মহত্যা করতে উদ্যত মানুষকে বাঁচানো, ভিকটিম উদ্ধার,বাল্য বিয়ে রোধ, বিপদে পড়া মানুষের সেবাসহ নানা সুবিধা দিতে পারছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে দেশের পুলিশ বাহিনী। ৯৯৯ সেবা পুলিশকে অসহায় মানুষের কাছে ‘জনবান্ধব’ করে তুললেও যানবাহন সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে।
এবিষয়ে ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি ব্যারিস্টার মোঃ হারুন-অর-রশিদের (বিপিএম-সেবা) সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, পুলিশের এ প্রশংসার দাবিদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সহযাত্রী প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা মাননীয় সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ,আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত রেসপন্স করে যেকোন সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে । ট্রিপল নাইনের সুবিধা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ৯৯৯ এর প্রতিটি ডেস্ক সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকে। সেখানে কর্মরতরা সবাই কলের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন।
ডিআইজি ব্যারিস্টার মোঃ হারুন-অর-রশিদ বলেন, জনগণকে নিয়ে ময়মনসিংহসহ দেশের সকল স্থানেই সোশাল ক্রাইম দূর করতে আমরা জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ চালু রেখেছি। তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে এই সেবা দিতে গিয়ে অনেক সময় যানবাহনের ব্যয় নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় করতে হয়। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তায় থামানো হয় বাল্যবিবাহ। এ রকম ঘটনা আছে অসংখ্য। জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে প্রাণনাশের আশঙ্কা আশঙ্কা, ধর্ষণ–সংক্রান্ত ঘটনা, গৃহকর্মী নির্যাতন, কাউকে আটকে রাখা, লিফটে আটকে পড়া, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা, দুর্ঘটনা, অগ্নিকা-ের ঘটনা, অ্যাম্বুলেন্স, পারিবারিক সমস্যা সমাধান, নিখোঁজ শিশু উদ্ধার, গাছ কাটা বন্ধ করা, শব্দদূষণ ছিনতাইসহ নানা ধরনের সমস্যায় সাধারণ ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। রাত কিংবা দিন যেকোন সময় সেবা দিচ্ছে পুলিশ।
তবে পুলিশের পরিচালনায় এই জাতীয় জরুরি সেবায় জনবল ঘাটতি রয়েছে। গাড়ির স্বল্পতা রয়েছে। তারপরও সেবাটি মানুষের আস্থার জায়গাটা করে নিতে পেরেছে। মানুষ প্রশংসা করছে। এখন দরকার হচ্ছে, ৯৯৯ তে ফোন করলে যে ধরনের সেবা পাওয়া যায়, তা মানুষকে জানানো।
জানা যায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে প্রায় দুইবছর আগে এই জরুরি হেল্পলাইন নম্বরটি চালু করা হয় । নাম্বারটিতে মূলত পুলিশি সেবার চাহিদা থাকে বেশি। কেউ ফোন করলে যত দ্রুত সম্ভব সার্ভিস দেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ । কেউ পুলিশের সেবার জন্য ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ সমাধানারে পথ খোঁজে। ডিআইজি ব্যারিস্টার মোঃ হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রতিদিনই দেশের আনাচে-কানাচে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। এ জন্য আমরা আপনাদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে আমাদের এই সেবা। মানুষ জানমালের নিরাপত্তার জন্য আমাদের ওপর নির্ভর করেন। আপনাদের সম্পদ আমানতের নিরাপত্তা দেওয়াও আমাদের দায়িত্ব। ডিআইজি বলেন, এই সেবার সহযোগী এ্যাম্বুলেন্স আমরা খুবই দ্রুত পাবো বলে জেনেছি। তখন সুবিধা আরও বেড়ে যাবে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন ৯৯৯:
হেল্প লাইনের বিভিন্ন সুবিধা ও তথ্য নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নিজের ফেসবুক একাউন্টে এক পোষ্ট দেন। সেখানে তিনি কিভাবে ৯৯৯ কাজ কওে এবং ব্যবহার করতে হবে তার বিশদ বর্ণনা করেন। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু ডেইলি সাতক্ষীরার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
ন্যাশনাল হেল্পডেস্ক – ৯৯৯। কেমন করে ব্যবহার করবেন ৯৯৯ জরুরি সেবা ? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে ৯৯৯ জরুরি সেবা। যে কোন মোবাইল নম্বর থেকে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি কল করে বাংলাদেশের নাগরিকরা জরুরি মুহুর্তে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা এ্যাম্বুলেন্স সেবা পাবেন। ৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত এজেন্টরা জরুরি মুহুর্তে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন। কিভাবে এই সেবাটি ব্যবহার করতে হবে, নিচে তার বিস্তারিত জানানো হল। বিভিন্ন ধরণের কল ও জরুরি সেবা প্রদানের জন্য ন্যাশনাল হেল্পডেস্ক-৯৯৯ এর অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সঠিক ও মান সম্মত সেবা প্রদানের জন্য এই সকল এজেন্টরা কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে থাকেন। তবুও যখন কোন নাগরিক ৯৯৯ এ কল করবেন তখন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়-
১. ঠিকানা প্রদানঃ
জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য হল সাহায্য প্রার্থীর লোকেশন বা ঠিকানা জানা। অপারেটকে (এজেন্ট) যতটা সম্ভব আপনার সঠিক অবস্থান বলুন, এক্ষেত্রে জেলা বা উপজেলার নামও বলতে হবে । আপনার সঠিক অবস্থান জানা না থাকলে পার্শ্ববর্তী বড় রাস্তা, বাজার বা হাইওয়ের নাম উল্লেখ করতে পারেন।
২. প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানঃ
আপনাকে সঠিক সেবা প্রদানের জন্য অপারেটর বা জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এক্ষেত্রে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ) আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবেন যাতে তারা যথাযথ কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার প্রয়োজন জানাতে পারেন। অথবা আপনাকে জীবন রক্ষাকারী কিছু পরামর্শ বা করণীয় যেমন সম্পর্কে জানাতে পারেন। এ ধরণের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান করে অপারেটরকে সহায়তা করুন। অবশ্য আপনার প্রয়োজনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে হয়তো একই প্রশ্নের উত্তর একাধিকবার দেয়া লাগতে পারে; বিশেষ করে ৯৯৯ থেকে কল ট্রান্সফার হয়ে পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিস বা হাসপাতালে পাঠানো হলে এমনটা হতে পারে।
৩. ধৈর্য্যশীল থাকাঃ
কলের সময় শান্ত থাকুন এবং আপনার সমস্যা বিস্তারিত তুলে ধরুন। অনেক সময় দেখা যায়, নাগরিক তার সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে থাকেন। এমনটা করা উচিত নয়। এর ফলে অপারেটরের মূল সমস্যাটা ধরতে ও প্রকৃত সাহায্য করতে অসুবিধা হয়। মনে রাখবেন, আপনি যত শান্ত থাকবেন, আপনি তত বিশদভাবে আপনার ঘটনার বর্ণনা দিতে পারবেন এবং অপারেটরও আপনাকে তত ভালভাবে সেবা প্রদান করতে পারবেন।
৪. আপনার জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করুনঃ
জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যার সময় কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতার সাথে তথ্য দিন। আপনি নিজে নাকি আপনার কাছের কেউ সমস্যায় পড়েছেন? কিভাবে হল? আপনার কোন ধরণের জরুরি সেবা প্রয়োজন – এ্যাম্বুলেন্স? পুলিশ? নাকি অন্য জরুরি সেবা? কেউ আহত হলে তার পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে বলার চেষ্টা করুন – আহত ব্যক্তির অবস্থা কি খুবই আশঙ্কাজনক? তার চেতনা আছে কি? তিনি কি শ্বাস নিতে পারছেন? তার শরীর থেকে কি রক্ত বের হচ্ছে? আপনার সাধ্যমত রোগীর অবস্থা বলার চেষ্টা করুন, আপনার কথা বলতে অসুবিধা হলে পাশের কাউকে দিয়ে বলাতে পারেন, কল না কেটে লাইনে থাকুন।
৫. এ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুনঃ
৯৯৯ সার্ভিসের মাধ্যমে যে এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়, তা কিন্তু বিনামূল্যে নয়।বস্তুত বাংলাদেশের কোন কর্তৃপক্ষই বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করে না। আর ৯৯৯ যেভাবে কাজ করে, নাগরিকের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ফলে এ্যাম্বুলেন্সের ধরণ, গন্তব্যস্থল ইত্যাদি অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। তাই এ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে এই সকল তথ্য অপারেটরকে সঠিক ভাবে প্রদান করুন। মনে রাখা প্রয়োজন, ৯৯৯ থেকে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয় না।
৬. ফায়ার সার্ভিসের সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুনঃ
শুধু মাত্র অগ্নিকান্ড নয়, ফায়ার সার্ভিস আরো নানা ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন সড়ক দূর্ঘটনা, নৌ দূর্ঘটনা, আটকে পড়া মানুষ বা পশু, পাখি উদ্ধার ইত্যাদি। ফলে এই ধরনের সেবার প্রয়োজন হলে ৯৯৯ এ ফোন করুন। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সাহায্য পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অপারেটরকে সহায়তা করুন। চলন্ত অবস্থায় এমন ঘটনা দেখলে নিশ্চিত হবার চেষ্টা করুন, আপনার ফোন করার পূর্বেই ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশের কোন ইউনিট সেখানে পৌঁছেছে কি’না।
৭. পুলিশের সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুনঃ
জরুরি পুলিশী সেবার ক্ষেত্রে ৯৯৯ অপারেটর আপনাকে নিকটস্থ থানার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। আপনি সেখানে আপনার অভিযোগটি জানাতে পারবেন। যেহেতু রেফারেন্সের জন্য ৯৯৯ এ কল রেকর্ড করা হয়ে থাকে, তাই পুলিশের সাথে কথা বলার জন্য সঠিক তথ্য প্রদান করুন।শত্রুতাবশত কাউকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে ৯৯৯ এ ফোন করলে আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে । পুলিশী সাহায্যের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই নিকটস্থ থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হয়। কারণ লিখিত অভিযোগ ছাড়া অনেকেক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে না। ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আপনার করনীয় সম্পর্কে জেনে নিন।
৮. অপরাধীর বর্ণনা দিনঃ
আপনি যদি কোন অপরাধ ঘটতে দেখেন তাহলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে পৌঁছান। যত দ্রুত সম্ভব ৯৯৯ এ কল করুন। আপনি অপরাধীকে চিনে থাকলে তা জানান কিংবা কাউকে সন্দেহ করেন কিনা তাও জানান। অপরাধীর হাতে অস্ত্র ছিল কিনা জানান। অপরাধী দেখতে কেমন? তার ধর্ম? আনুমানিক বয়স, উচ্চতা, ওজন, কাপড়ের রঙ প্রভৃতি তথ্য দিন। অপরাধী এখন কোথায়? তারা কি পালিয়েছে? কোন দিকে গেছে? তাদের সাথে কোন গাড়ি ছিল কিনা? কি গাড়ি? গাড়ির মডেল, রঙ এবং গাড়ির সাইজ কতটুকু? এমনকি গাড়ির নাম্বারের অংশবিশেষ প্রভৃতি তথ্য দিন।
৯. ফোন খোলা রাখুনঃ
আপনি যদি কোন মোবাইল ফোন থেকে কল করে থাকেন তাহলে আপনার নাম্বারটি খোলা রাখুন, যাতে অপারেটর যেকোন মুহুর্তে আপনার সাথে পুনরায় যোগাযোগ করতে পারে। এর বাইরে আপনার চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা এ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষও আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
১০. সচেতনতা তৈরি করুনঃ
৯৯৯ ইমাজেন্সি সার্ভিসে বিনা কারণে প্রতিদিন প্রচুর শিশু ফোন করে থাকে। এর ফলে প্রকৃত বিপদগ্রস্থরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। সময় ও সুযোগ করে আপনার সন্তানদের শেখান কিভাবে এবং কখন ৯৯৯ এ ফোন করতে হবে। কখন ফোন করবে না সেটিও শোখান।
১১. প্রতিটি কলই গুরুত্বপুর্ণঃ প্রতিটি কলই গুরুত্বপূর্ণ সেটা ফলস কলই হোল আর প্রাঙ্ক কল হোক। যদিও এসব কল প্রকৃত জরুরি সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। ভুয়া কলের বিরুদ্ধে আইনানুগ বেবস্থা নেয়া হবে । আপনার অসতর্কতার কারণে যাতে ৯৯৯ কল না যায় সেজন্য আপনার মোবাইলটি লক করে রাখুন। আপনার জন্য অপারেটররা অপেক্ষা করছে। ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন।