সোহরাব হোসেন আশাশুনি : মহাকবি মাইকেল মধুসুধন দত্ত সহ বহু গুণিজনের স্মৃতিবিজোড়িত কপোতাক্ষ নদ আজ সমতল ভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আশাশুনি সহ নদের তীরবর্তী বিভিন্ন শ্রেণি বা পেশার মানুষেরা দীর্ঘ ২যুগেরও বেশি সময় ধরে চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে আছে কপোতাক্ষ নদ যেন তার হারানো যৌবন ফিরে পায়।
সরেজমিন ঘুরে জানাযায়, অপরিকল্পিত বেঁড়িবাধ, অবৈধ দখলদারদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে কপোতাক্ষ নদ তার গতিপথ পাল্টেও শেষরক্ষা পায়নি। বিভিন্ন দিক থেকে কপোতাক্ষ নদের ৮০টি সংযোগ খাল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা আর শুষ্ক মৌসুমে পানি শূন্যতা হয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিবছর তীরবর্তী এলাকা গুলোর হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। অপর দিকে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্ষেতের ফসল, পুকুর, মৎস্যঘের তলিয়ে পানিতে একাকার হয়ে যায়। আর এ কারণে কপোতাক্ষ তীরবর্তী মানুষ গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে থাকে। বর্তমান অভিশপ্ত কপোতাক্ষ অববাহিকার আশাশুনি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো। উপজেলার দরগাহপুর, কাদাকাটি, বড়দল, খাজরা ও অনুলিয়া ইউনিয়ন গুলোর বিভিন্ন পেশার মানুষ ও ৫হাজার জেলে ও মৎস্যজীবী পরিবারের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম দূর্দশা। তার ভিতরে দরগাপুর, কাদাকাটি, বড়দল ইউনিয়নে নদটির নাব্যতা নেই সম্পুর্ণ রুপে সমতল ভুমি। গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি আর ভুমি দস্যুদের ভুমি দখল। বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপ সূত্রে জানা গেছে,কপোতাক্ষ নদটির বিচ্ছিন্ন ৮২কিলোমিটার অংশ বিশেষ করে এর উজানের অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। পানি প্রবাহ না থাকায় শুরু হয়েছে নদের জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা। নদীর জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। চলছে চাষাবাদ ও ঘের তৈরি করে মাছ চাষ। দীর্ঘদিন ধরে এরকম চলে আসলেও প্রশাসনের এদিকে কোনো নজর নেই। এই সুযোগে ক্ষীণ কপোতাক্ষের চর রাতারাতি প্রভারশালী দখলবাজরা বাড়ি ঘর ও দোকানপাট নির্মাণ, মৎস্য ঘের, ধানচাষ সহ ইটভাটা নির্মাণ অব্যাহত চালিয়ে যাচ্ছে তহসীলদারেরা কৌশলে বড় অংকের উৎকোচের বিনিময়ে কয়েক বছর পিছন থেকে একাধিক বছরের বন্দোবস্ত দিচ্ছে। এ ছাড়া সংযোগ খাল গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের জন্য বন্দোবস্ত অব্যহত রয়েছে। এভাবেই চলতে থাকলে আগামি বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাত হলেই পানিতে তলিয়ে কয়েক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে। কপোতাক্ষ যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনায় খনন বাস্তবায়ন না হয় এবং খালগুলো যদি খননে উদ্যোগ গ্রহণ না করে তা হলে খুব শীঘ্রই দেশের ভূ-খন্ড থেকে কপোতাক্ষসহ খাল গুলো বিলীন হয়ে সমতল ভূমিতে পরিণত হবে। সেই সমতল ভূমিতে বেশি দেরি করে কপোতাক্ষ নদ ও সংযোগ খাল গুলো খনন করতে চাইলেও পাওয়া যাবে না কোনো নিশানা বা নির্ধারিত সীমানা। সব মিলিয়ে এখানে নদী একসময় ৭৫০ মিটার প্রশস্ত ছিল। বর্তমানে প্রায় ১৭০ মিটার। চাঁদখালীর কাছে নদীটি প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া। ৮০টি সংযোগ খাল পুণঃখননের জন্য এখন সময়ের দাবি মাত্র।
পূর্ববর্তী পোস্ট