বিদেশের খবর : টানা তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই তাকে এ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। মমতাকে হারাতে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মাঠে নেমেছিলেন খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রেকর্ড সংখ্যকবার প্রচার চালাতে পশ্চিমবঙ্গ এসেছিলেন তিনি। মমতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়েননি।
তবে এত কিছুর পরও মমতার জয় রুখতে পারলেন না মোদি। এ পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে মমতার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া তিনি কি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই রাজনীতির ইনিংস শেষ করবেন, নাকি দিল্লিতেও তাকে একদিন প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হিসেবে দেখা যাবে- এ প্রশ্ন নতুন করে উঠতে শুরু করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ দখলে মরিয়া বিজেপিকে যেভাবে তিনি পর্যুদস্ত করে হারিয়েছেন, তাতে অনেকেই মনে করছেন আগামী সাধারণ নির্বাচনে মোদিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মমতাই হতে পারেন যোগ্যতম মুখ। মমতাকে পর্যুদস্ত করতে চেষ্টার ত্রুটি করেনি বিজেপি। মমতা বা তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বহু ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ভোট প্রচারে এসে ‘পিসি-ভাইপো’র দুর্নীতি ঘিরে অনেক কথা বলেছেন। তার পরও মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের এভাবে জয় পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে সর্বভারতীয় স্তরে তাকে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা দিতে চলেছে।
কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা কমল নাথ বলেন, মমতা এখন আমাদের দেশের নেতা। স্থানীয় সময় বুধবার সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তৃণমূল কংগ্রেসপ্রধানকে কমল এমন আখ্যা দেন বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। নজিরবিহীন বিধানসভা নির্বাচনে কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তিনি এ পর্যায়ে গেছেন। মমতাকে একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রী মোদি, তার মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই), আয়কর বিভাগের মতো ব্যক্তি ও সংস্থাকে সামলাতে হয়েছে। কিন্তু কেউই তার সামনে দাঁড়াতে পারেনি বলেন তিনি।
তৃণমূল কংগ্রেসের সিনিয়র এমপি কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, তার দল মমতাকে একদিন অবশ্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চায়। তিনি বলেন, মমতা একেবারে শূন্য থেকে উঠে এসেছেন শুধু নিজের দৃঢ়তা, দক্ষতা আর প্রশাসনিক সামর্থ্যের জোরে। মোদির চ্যালেঞ্জার হয়ে ওঠার মতো সব যোগ্যতাই তার আছে। তবে বিষয়টা নিয়ে দলে এখনও আলোচনা হয়নি। কিন্তু তৃণমূলের নেত্রী একদিন যে অবশ্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, সেটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি বলেন তিনি।
কলকাতায় প্রবীণ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও অধ্যাপক অমিত ভট্টাচার্য মনে করেন, মমতার দিল্লিমুখী হওয়াটা মোটেই ঠিক হবে না। জানি না তিনি কী করবেন। তবে আমার মতে, তিনি যেখানে আছেন সেখানে থাকাটাই বোধ হয় ভালো। তবে আলোচনা-সমালোচনা সব পেরিয়ে রাজনীতিতে মমতাই যে মোদিবিরোধী প্রধান মুখ হয়ে উঠছেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। খবর বিবিসি, এনডিটিভি।