নিজস্ব প্রতিনিধি : অক্সিজেনে সংকটে সামেক হাসপাতালে ৮রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তকাজ সম্পন্ন করেছেন। রোববার বেলা ১১টায় তারা সামেক হাসপাতালে আসেন। পরে তারা হাসপাতালের দূর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তদন্ত প্রতিবেদন ০৫ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, অক্সিজেন সংকটের ঘটনায় স্থানীয় সামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি আরও সাত দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।
তদন্ত টিমের প্রধান ডা. কাজী আরিফ আহমেদ জানান, অক্সিজেন সংকটে রোগী মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু শুক্রবার বন্ধ থাকায় এবং নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলাসহ আনুসঙ্গিক কারনে এত স্বল্প সময়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব নয়। যেকারণে আরও সাত দিন সময় চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা মেডিকেলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংকটে পড়ে অন্তত আটজন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা মেডিকেলের পক্ষ থেকে মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কাজী আরিফ আহম্মেদকে প্রধান করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মারুফ আহমেদ ও সাতক্ষীরা মেডিকেলের ডা. সাইফুল্লাহকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া একই ঘটনায় খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শেখ মোশাররফ হোসেন। কমিটির অপর সদস্য হলেন, সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল গাজী ও শওকত হোসেন।
এবিষয়ে টিমের প্রধান বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, সামেক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক, অধ্যক্ষ, ওই দিনের দায়িত্বরত ২২জন কর্মকর্তা, কর্মচারীর লিখিত বক্তব্য নিয়েছেন। তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক ঘটনা তদন্তের পর লিখিত প্রতিবেদন যত দ্রুত সম্ভব দাখিল করবেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এরপর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেলের তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদা জানান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার তদন্তে এসেছে। তাদের তদন্ত কাজে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে। আজকে তারা তদন্তকাজ সম্পন্ন করেছেন। আগামিকালই তারা তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবেন। এছাড়া সাতক্ষীরা মেডিকেলের নিজস্ব তদন্ত কমিটি সাত দিনের সময় চেয়েছে। তাদেরও সময় বর্ধিত করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান,বিভাগীয় পরিচালকের গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত করতে এসেছেন। সিভিল সার্জন হিসেবে আমার পর্যবেক্ষণ তাদেরকে জানিয়েছি। ১ জুলাই তারিখে আমি সামেক হাসপাতালে এসে যা দেখেছি,নথিপত্রের যে রেকর্ড পেয়েছি,তা জানিয়েছি। আমার স্টেটমেন্ট দিয়েছি। শুধু আমি না,তত্বাবধায়ক,আইসিইউ ইনচার্জ,আইসিইউ কনসালট্যান্টসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য তারা নিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে কোন পরামর্শ যদি থাকে,রিপোর্টে তা উঠে আসবে। কারো অবহেলায় যদি শাস্তির সুপারিশ যদি করা হয়,সেটাও বিভাগীয়ভাবে করা হবে বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে অক্সিজেন সংকটের কারণে আইসিইউ, সিসিইউ এবং সাধারণ করোনা ওয়ার্ডে উপসর্গ ও করোনা নিয়ে চিকিৎসাধীন ৮ জন মারা যান। সকাল থেকে অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে ডাক্তাররা কর্তৃপক্ষকে তা অবহিত করেন। কিন্তু যথা সময়ে সাতক্ষীরার সেন্ট্রাল অক্সিজেন পন্ড পূরণ না করায় অক্সিজেনের প্রেসার কমতে থাকে। একপর্যায়ে অক্সিজেনের প্রেসার কমে যাওয়ায় রোগীরা ছটফট করতে থাকেন। এসময় যে যার মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার বাইরে থেকে নিয়ে এসে রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। রাত ৮টার মধ্যে ৮জন রোগী মারা যান। এর আগে ওইদিনই করোনা উপসর্গে আরও ৬ জনের মৃত্যু ঘটে।