দেশের খবর : গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযোগের মুখে পালিয়ে ভারতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের কথিত পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আসাদুজ্জামান।
উপকমিশনার জানান, ভারতে অনুপ্রবেশের পর গ্রেফতারের খবর সে দেশের পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া ছাড়াও নিজ কর্মস্থলে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতির কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।এ ছাড়া রানার বিরুদ্ধে একটি নিয়মিত মামলাও হয়েছে। সেটি তদন্ত করা হবে।
সোহেল রানার বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ আছে কি না- তাও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান আসাদুজ্জামান।
সোহেল রানাকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করেছে। পরে কোচবিহারের আদালতে শনিবার তাকে হাজির করা হলে আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ই-অরেঞ্জ গ্রাহকের ৭৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়েছে। মামলায় সোহেল রানাসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর মামলাটি করা হয় বলে শনিবার রাতে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান। তিনি জানান, মামলার অপর আসামিরা হলেন, ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহ, নাজনিন নাহার বিথি, কাওসার, কামরুল হাসান, আব্দুল কাদের, নূরজাহান ইসলাম সোনিয়া ও রুবেল খান।
ওসি আরও জানান, শুক্রবার মামলাটি আদালতে পাঠানো হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমান এজাহার গ্রহণ করেন। এরপর তদন্ত করে ১০ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন। ৩১ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে ইসতিয়াক হোসেন টিটু নামে এক ভুক্তভোগী সোহেল রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ওসিকে এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
এর আগে অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় আগস্টে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। একটি মামলায় গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ওই দুই মামলায় ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন এবং তার স্বামী মাসুকুর রহমানসহ অন্যদের আসামি করা হলেও সোহেল রানাকে আসামি করা হয়নি।
২ সেপ্টেম্বরের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আগস্টে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাসহ মোট দশজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে চায়নি। এ কারণে তখন এজাহার থেকে সোহেল রানার নাম বাদ দেওয়া হয়। এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসামি সোহেল রানা যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন।
পুলিশের গুলশান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠার শুরু থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখেন সোহেল রানা। তবে আগে করা দুটি মামলায় তাকে আসামি না করায় তিনি কিছু নির্ভার ছিলেন। ২ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে মামলাটি গ্রহণ করায় কিছুটা চাপে পড়েন তিনি। ওইদিন রাতেই বনানী থানা থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান শেখ সোহেল রানা। মূলত, গ্রেফতার এড়াতেই ভারত হয়েই অন্য কোনো দেশে যেতে চেয়েছিলেন বিতর্কিত এ পুলিশ কর্মকর্তা।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের খবরে শনিবার বলা হয়েছে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে শুক্রবার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে বিএসএফ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা অপরাধমূলক একাধিক কাজে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। বিস্তারিত জানতে সোহেল রানাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন বিএসএফ সদস্যরা। আটকের সময় তার কাছ থেকে বিদেশি পাসপোর্ট, একাধিক মোবাইল ফোন এবং এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান শনিবার বলেছিলেন, সোহেল রানা দুদিন ধরে অফিস করছেন না। ছুটিও নেননি। তার ফোন বন্ধ পাচ্ছি। গণমাধ্যম সূত্রে খবর পেয়েছি তিনি নেপাল-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে আটক হয়েছেন। তবে আমরা এখনো তা নিশ্চিত হতে পারিনি।