নিজস্ব প্রতিনিধি:
এক খন্ড জমিতে মাটির ঘর, সংসার চালাতে হিমশিম খায় দিন মজুর বাবা, লেখা পড়ার সুযোই ছিলনা বললেও চলে। তার মধ্যে স্কুল পড়াকালিন বিয়েতে জড়িয়ে জীবনে চলে আসে বড় ঝড় শেষ পরিনতি বিবাহ বিচ্ছেদ। এমন প্রতিকুলতাকে হার মানিয়ে নিজেই নিজের শক্তি হয়ে জিপিএ ৫ পেয়ে জীবনে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে শিমলা খাতুন নামের এক এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী।
অদম্য মেধাবি শিমলা খাতুন সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতা এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান কলেজ থেকে ২০২২ সালের এইচ এসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশে জিপিএ ৫ পেয়ে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। সে জেলার তালা উপজেলার নগরঘাটা এলাকার আহম্মাদ আলী ও মোমেনা খাতুনের ছোট মেয়ে।
অদম্য মেধাবী শিমলা খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান তার জীবনের গল্প। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই অভাব দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। তিন বোনের মধ্যে সে ছোট, তার ছোট একটা ভাইও আছে। অভাব আর টানাপোড়নের মধ্যে নগরঘাটা কবি নজরুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেনীতে পড়া কালিন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিয়ের পিড়িতে বসে থমকে যায় লেখা পড়ার গতি। তার পরেও নিজের চেষ্টায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৭৪ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হয় এসএসসি পরীক্ষায়।
স্বামী তাকে আর পড়াতে রাজি হয়নি। কিন্তু বিনেরপোতা এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান কলেজের স্নাতক পর্যায়ে ছাত্রী শিমলার আপন বড় বোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন কলেজটিতে। কিন্তু ভর্তি হওয়ার টাকা ছিলো না।
এক পর্যায়ে এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান কলেজের প্রধান সহকারি মো: আকতারুজ্জামান (জামান) এর কাছে অদম্য মেধাধী শিমলার জীবন কাহিনী বলেন তার বড় বোন নাজমা খাতুন। সে বলে শিমলা পড়তে চায় অপনারা কিছু একটা করুন। তার কথায় প্রধান সহকারি জামান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শিক্ষক মন্ডলী ও পরিচালনা পরিষদকে জানালে শিমলাকে সকল ধরনের সহযোগীতা করতে রাজি হয় কর্তৃপক্ষ। যথারিতী সে মানবিক বিভাগে এইচএসসি ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়। কিন্তু তার স্বামী কোন ভাবেই তাকে পড়তে দিতে রাজিনা।
এর মধ্যে পরে বছর না ঘুরতেই জীবনে নেমে আসে আরেক ঝড় বিবাহ বিচ্ছেদে পড়তে হয় তাকে। স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু শত বাঁধা শিমলাকে আটকাতে পারেনি। অদম্য মেধা ও নিজের চেষ্টায় অর্জন করেছে এপ্লাস (জিপিএ-৫)।
সকল দু:খ,দুর্দশার মধ্যে দিয়েও হার মানেনি শিমলা ২০২২ সালের এইচ এসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশে সে জিপিএ ৫ পেয়ে সফলতা অর্জন করেছে। সে ভবিষ্যতে পড়া লেখা শেষ করে বড় সরকারী কর্মকর্তা হতে চায়।
এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ সরদার রমেশ চন্দ্র ও শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক এম সুশান্ত জানান, আমরা সবসময় মেধাবী ও গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগীতা করা চেষ্টা করি। সরকারী, বেসরকারী সহযোগীতা পেলে শিমলা বহুদূর যেতে পারবে। তার পথচলাকে এগিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতা করার আহব্বান জানান।
এদিকে শিমলার লেখা পড়া চালানোর মত সমর্থ নেই তার পরিবারের। পরিবারের পক্ষ থেকে মেধাবী মেয়ের পড়ালেখা এগিয়ে নিতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগীতা কামনা করেছেন তার পরিবার।