প্রেস বিজ্ঞপ্তি : সাতক্ষীরার তালায় প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় চাষকৃত ক্ষেত ভরে গেছে হলুদ, কালো ও সুবজ তরমুজে। আশানুরূপ ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। একই সাথে বেশ লাভেরও আশা করছেন তারা।
তালা উপজেলার তেতুলিয়া ও ভাইড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকের ক্ষেতে মাঁচায় ঝুলছে শত শত সুদৃশ্য তরমুজ। টুঙ্কিনারী, বুলেট কিং ও কানিয়া (বাংলালিঙ্ক) জাতের এসব তরমুজের কোনোটি বাজারজাতের সময় হয়েছে, কোনোটি এখনো জালি। খেতেও সুস্বাদু।
স্থানীয় কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, আমি প্রথমবারের মতো এক বিঘা পাঁচ শতক জমিতে গ্রীষ্ম তরমুজ চাষ করেছি। এজন্য মে মাসের শেষ সপ্তাহে বীজ রোপণ করি। ইতোমধ্যে আমার ক্ষেত তরমুজে ভরে গেছে। চলতি সপ্তাহে তরমুজ বিক্রি শুরু করবো।
তিনি আরও বলেন, তরমুজ চাষে আমার সবমিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাইকাররা এসে দরদাম করে গেছে। তারা ৩৫-৪০ টাকা কেজি দিতে চায়। এ হিসেবে আমি অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। এতে অন্যান্য ফসলের তুলনায় আমার কমপক্ষে ছয়গুন লাভ হবে।
স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টা তাকে তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রচেষ্টা প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে তরমুজ চাষের জন্য বীজ, মালচিং পেপার, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ এমনকি চাষাবাদের জন্য নগদ টাকাও দিয়েছে। আমরা প্রথমে একটু সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেও এখন দেখছি আসলেই গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ অত্যন্ত লাভজনক।
শুধু ইকবাল হোসেন নয়, তেতুলিয়া গ্রামের শিপন বিশ^াস, সাইফুল বিশ^াস, মোঃ রফিকুল ইসলাম ও শরিফুল বিশ^াস, ভাইড়া গ্রামের মুক্তার মহালদার, লিয়াকত মহালদারসহ আরও অনেকই চাষ করেছেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ।
কৃষক শিপন বিশ^াস বলেন, সাধারণত ধান ও পাট উঠতে চার মাসের অধিক সময় লাগে। সেখানে তরমুজ ওঠে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে। তরমুজে লাভও ধান বা পাটের চেয়ে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত গুণ। আমরা এর পরপরই এই মাঁচাতেই শসা লাগাবো। তাও দুইমাসের মধ্যে বিক্রিযোগ্য হয়ে যাবে। অর্থাৎ একবার ধান বা পাট উঠতে যে সময় লাগে, তাতে একবার তরমুজ একবার শসা চাষ করা যায়। তরমুজ ও শসা মিলে লাভ ছাড়িয়ে যাবে কল্পনাতীত।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষিবিদ নয়ন হোসেন বলেন, পিকেএসএফ’র অর্থায়নে উন্নয়ন প্রচেষ্টার সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষিখাতের আওতায় স্থানীয় কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রথমবারেই তারা উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে। আশা করি মালচিং পদ্ধতিতে মাঁচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের প্রযুক্তি এই এলাকায় আরও সম্প্রসারিত হবে।
তালা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার শুভ্রাংশু শেখর দাশ বলেন, তালার ভাইড়া ও তেতুলিয়া গ্রামে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রচেষ্টা কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করেছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সরকারের কৃষি বিভাগও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের এই প্রযুক্তি আগামীতে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে প্রত্যাশা করছি।