চাপে ভেঙে পড়ার জন্য জোটা ‘চোকার’ তকমাটা কোনভাবেই সরিয়ে দিতে পারছে না সাউথ আফ্রিকা। সেইসঙ্গে স্পিনে তাদের দুর্বলতাটাও ভরা-হাটে উন্মুক্ত হয়ে পড়ল আরেকবার। ফলাফল, ইংল্যান্ডের দেয়া ৩৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে যেয়ে মঈন আলির স্পিন ফাঁদে আটকে ১১৯ রানেই অলআউট। সিরিজের প্রথম টেস্টে হারটি ২১১ রানের।
লর্ডস টেস্টের চতুর্থ দিনে রোববার মোট ১৯ উইকেট পড়েছে। যার ১০টি আফ্রিকানদের। সেখান থেকে মঈনের ঝুলিতেই গেছে ৬টি। এটি ইংলিশ অফস্পিনারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। খরচ করেছেন ৫৩ রান। আগের সেরাটি ছিল ৬৭ রানে ৬ উইকেট।
দুই ইনিংস মিলিয়ে এক টেস্টের সেরা বোলিং ফিগারও এটি তার। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটের সুবাদে ১১২ রানে ১০ উইকেট গেছে ঝুলিতে। সাদা পোশাকে প্রথমবার এই কীর্তি গড়লেন। এক টেস্টে আগের সেরাটি ছিল ১২৯ রানে ৮ উইকেট, ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে, সাউদাম্পটনে।
এই কীর্তিটি ৩০ বর্ষী অলরাউন্ডার মঈনকে বসিয়ে দিয়েছে আরো পাঁচ ইংলিশ গ্রেটের পাশে। প্রথমে ৮৭ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। তাতে একই টেস্টে ১০ উইকেট ও ফিফটি করার কীর্তিতে ইয়ান বোথাম, জন লেভার, টনি গ্রেগ, ফ্রাঙ্ক উইল্লে ও বিলি বেটিসের পাশে বসলেন তিনি। মঈনের আগে ইংলিশদের মধ্যে সর্বশেষ এই কীর্তিটি ছিল বোথামের, সেটিও ১৯৮০ সালের ঘটনা, ভারতের বিপক্ষে ওয়াংখেড়ে টেস্টে। ৩৭ বছর, দীর্ঘ খরারই অবসান বলা চলে।
সাউথ আফ্রিকা আসলে ম্যাচটা হেরে বসেছে দলীয় ২৮ রানের মাথাতেই। যখন ৪ উইকেট হারিয়ে বসেছে তারা। ১৯৯৮ সালে সর্বশেষবার ইংল্যান্ডের মাটিতেই ২৪ রানে চার উইকেট হারানোর পর দীর্ঘ সময়ে আর কখনো এমন লজ্জায় পড়েনি প্রোটিয়ারা।
লজ্জার দিনেও দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন ছয় প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। কেউই টেনে নিতে পারেননি ইনিংসটা। সর্বোচ্চ টেম্বা বাভুমার ২১! পরে ভারনন ফিনল্যান্ডারের অপরাজিত ১৯, কুইন্টন ডি ককের ১৮ আর মরনে মরকেলের ১৪-ই সেরা।
মঈনের দিনে বাকি চার উইকেট ভাগ করে নিয়েছেন লিয়াম ডসন ২টি, জেমস অ্যান্ডারসন ও মার্ক উড একটি করে।
এর আগে সকালে ১ উইকেটে ১১৯ রান নিয়ে শুরু করেছিলেন অ্যালিস্টার কুক ও গ্যারি ব্যালান্স। কিন্তু আফ্রিকার দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ইংল্যান্ডকে রান পাহাড়ে চড়াতে পারেননি তারা। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৩ রানে গুটিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। প্রথম ইনিংস থেকে লিড পাওয়া ৯৭ রান মিলিয়ে সফরকারীদের অবশ্য তিনশ পেরোনো লক্ষ্যই দিতে পারে ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড দিন শুরু করেছিল ১ উইকেটে ১১৯ রান নিয়ে। অপরাজিত থেকে নামা কুক ৬৯, ব্যালান্স ৩৪ রানে ফেরেন। অধিনায়কত্বে অভিষেকের প্রথম ইনিংসে ১৯০ করা জো রুট ৫, বেন স্টোকস ১ ও মঈন ৭ রানে ফিরে গেলে বিপদেই পড়েছিল স্বাগতিকরা।
প্রথম ইনিংসের মত আবারো স্টোকসকে সাজঘরে পাঠান কাগিসো রাবাদা। প্রথমবার বাজে শব্দচয়ন করে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া রাবাদা এবার স্টোকসকে আউট করে ঠোঁটে আঙুল চেপে প্রতিবাদ জানান। সতীর্থরাও কম যান না, তারা এগিয়ে এসে চেপে ধরেন রাবাদার মুখ।
সেখান থেকে লিয়াম ডসন শূন্য ও আগের ইনিংসে ঝড় তোলা স্টুয়ার্ট ব্রড রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে গেলে বিপদে আরো বাড়ে ইংলিশদের। পরে প্রতিরোধ গড়েন জনি বেয়ারস্টো, তার ব্যাটে আসে ৫১ রান। দশে নামা মার্ক উডের অবদান ২৮!
বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজ ৮৫ রানে চার উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের সেরা। মরকেল ও রাবাদা নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। বোলারদের এই প্রচেষ্টায় পরে জল ঢেলে দিয়েছেন ব্যর্থতার সবকলা পূর্ণ করা প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা।