তালা ডেস্ক : চারপাশে বাগান আর বাগন। ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে রয়েছে চারটি পূরাতন ভবন। সামনে রয়েছে আমবাগান। এরমধ্যে একটি দ্বি-তল ভবন একেবারেই নাজুক। অন্য তিনটি ধংস্বস্তুপ। এসব ভবন ও বাগানটি দীর্ঘদিন ছিলো পরিত্যাক্ত অবস্থায়। এ বাড়ি এবং বাগানটি বলায় বাবুর আমবাগান নামে পরিচিত এলাকায়।
তবে দীর্ঘদিন অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকা বাবু’র বাড়ি ও আমবাগানটি তালা উপজেলা প্রশাসনে’র উদ্যোগে হতে চলেছে ইকো পার্ক ও মিনি স্টেডিয়াম। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের তত্বাবধায়নে কাজ শুরু হয়েছে সেখানে।
ইসলামকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুভাস সেন জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন পরিদর্শন করে ইকো পার্ক ও মিনি স্টেডিয়াম বাস্তবায়নের জন্য উৎসাহিত করেন। নির্দেশনা ও পরামর্শে কাজ শুরু হলে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বাবু’র আমবাগানটি পরিদর্শন করেন। সর্বশ্রেণীর মানুষ এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে অবস্থিত এটি। বলায় ঘোষ ও অবলাকান্ত ঘোষের ছিলো এ বাগান-বাড়িটি। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তারা ইসলামকাটি ইউনিয়নের কর্তা ছিলেন। তবে ১৯৭১ সালে এ দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান তারা। সেই থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো তাদের বাসস্থান ও সামনের আমবাগানটি। প্রায় ৯ একর জমির উপর বসতবাড়ি ও সামনে প্রায় ১০ একর জমিতে রয়েছে বাগান। তারা ভারতে চলে যাওয়ায় ওই জমি সব বাংলাদেশ সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত হয়।
সোমবার (২৪ জুলাই) সরেজমিনে গোপালপুর আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, একটি স্কেবেটর (মাটি কাটা মেশিন) মেশিন মাটি কেটে উঁচু-নিচু সমানের কাজ করছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য সীমানা বরাবর ড্রেন কাটার কাজ চলমান রয়েছে। ঝোপ-ঝাড় পরিস্কার করছে সাত জন শ্রমিক। নাজুক ভবনটির একপাশে সুজিত মজুমদার আরেক পাশে রফিকুল ইসলাম পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছে। এছাড়াও বাগানের পাশ দিয়ে আরও ১২টি পরিবার ঘর নির্মান করে বসবাস করছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বাবুরা ভারতে চলে যাওয়ার পর, যে যার মতো দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসে তাদের জমি ও বসত বাড়ি। অনেকে ওই জমি ইজারা নিতে আগেই দখলে নিয়েছে। বর্তমানে ইজারা বন্ধ থাকলেও তারা দখল ছাড়েনি এখনও। এরমধ্যে উপজেলা প্রশাসন পার্ক ও মিনি স্টেডিয়ামের কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে কাজটি চলমান রয়েছে।
উপজেলার ঘোনা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। তিনি তার পরিবার নিয়ে বর্তমানে গোপালপুর গ্রামে বাবু’র আমবাগানে বসবাস করেন। কিভাবে বসবাস করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আমরা বাবু’র বাড়িতে কাজ করতাম। তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে আমরা এখানে বসবাস করে আসছি। তবে আমাদের এখনও তেমন কোন কাগজ পত্র হয়নি।’ এমন বক্তব্য ওখানে বসবাসকারী আমজেত, আজিজুল সহ চার জনের।
বাবুদের বসত ঘরে বসবাসকারি সুজিত মজুমদার জানান, আমি ১৯৭৪ সাল থেকে সরকারের কাছে থেকে এক সনা ইজারা নিয়ে বসবাস করে আসছি। ২০১৬ সাল পর্যন্ত সরকারের কাছে থেকে তার ইজারা নেওয়া আছে। চলতি বছর ইকোপার্ক ও স্টেডিয়াম করার জন্য সরকার তাদের কোন ইজারা দেয়নি। তবে তিনি সেখানে এখনও বসবাস করছে।’
ইসলামকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুভাষ সেন বলেন,‘উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইকোপার্ক ও মিনি স্টেডিয়ামের কাজ চলমান রয়েছে। নির্বাহী অফিসারের তত্বাবধায়নে কাজ এগিয়ে চলছে।’
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন জানান, উপজেলায় কোন বিনোদন পার্ক নেই। নেই মানুষের বিনোদনের কোন জায়গা। বাবু’র আম-বাগানটি যে যার মতো দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। তিনি বলেন, ‘কমিশনার স্যারের নির্দেশনা ও ডিসি স্যারের পরামর্শে বাবু’র আমবাগান ও বসতবাড়িতে ইকোপার্ক ও মিনি স্টেডিয়ামের কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে কাজটি চলমান রয়েছে।’
তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইউএনও সাহেব একদিন আমাকে বলেছিল। আমি সেখানে গিয়ে ছিলাম। এরপর আমার সাথে বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলেনি।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ বলেন, প্রতিটি উপজেলায় বিনোদন পার্ক তৈরি করার নির্দেশনা আছে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখানে অবৈধ দখলদার বা কেউ বাধা দিলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মুস্তফা লূৎফুল্লাহ বিনোদন পার্ক ও মিনি স্টেডিয়াম করার এমন উদ্দ্যোগ নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান। সাথে সাথে দ্রুত কাজটি বাস্তবায়নের জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
পূর্ববর্তী পোস্ট