সেই আদিকাল থেকে দেশে মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান। জন্নের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব (আধঘণ্টার মধ্যে) বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা উচিত।
পূর্ণ ছয় মাস (১৮০ দিন) বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ (এক ফোঁটা পানিও নয়) খাওয়াতে হবে। শিশুর জন্য মায়ের দুধ বাদে অন্য কোনো প্রাণীর দুধ, যেমন−গরু, ছাগল ইত্যাদির দুধ বা টিনের দুধ ব্যবহার করলে তাকে বিকল্প দুধ বলা হয়। বুকের দুধ শিশুর জীবনে শ্রেষ্ঠ সূচনা। শিশুর আয়ু, পুষ্টি, বৃদ্ধি ও বিকাশ−সব মঙ্গল নিহিত আছে এতে।
কবির ভাষায়−
ভূমিষ্ঠক্ষণ থেকে জগজ্বননীর অনুপম দান
তৃষ্ণা হরা, স্বর্ণকুম্ভ শ্বেতরক্ত দুগ্ধ সুধা পুষ্টি ধারা।
আর বিকল্প দুধ হচ্ছে শিশুর মৃত্যুবাণ। এর ব্যবহারে শিশুর অমঙ্গল তৈরি হয় নানাভাবে−
- শিশু ঘন ঘন অসুখে ভোগে। কেননা দুধ, নিপল ও বোতলের সঙ্গে কিংবা বিকল্প দুধ তৈরিতে ব্যবহূত পানির সঙ্গে সব সময় রোগজীবাণু থাকার আশঙ্কা আছে।
- গরমকালে দুধসহ বোতল কিছুক্ষণ থাকলেই তাতে দ্রুত রোগজীবাণু বাসা বাঁধে।
- বিকল্প দুধে মায়ের দুধের মতো রোগপ্রতিরোধক কোনো শক্তি থাকে না। শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কানপাকাসহ অন্যান্য রোগব্যাধির ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়। পরিণামে শিশু অপুষ্টি ও মৃত্যুর শিকার হয়।
- বিকল্প দুধে বেড়ে ওঠা শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- বিকল্প দুধে আয়রন কম থাকে বলে শিশু আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতায় ভোগে।
- গরুর দুধ প্রকৃত অর্থে বাছুরের জন্য। মানবশিশুতে সহজে হজম হয় না। শিশু প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যে কষ্ট পায়।
- বোতলের দুধে মায়ের খাটুনি ও খরচ অনেক। বোতলের ছিদ্রে একটু চাপ দিলে শিশু অনায়াসে দুধ পায়, যা মায়ের দুধের তুলনায় কিছুটা বেশি মিষ্টি। ফলে শিশু কষ্ট করে মায়ের দুধ খেতে চায় না। শিশু ধীরে ধীরে মায়ের দুধ খাওয়া কমিয়ে দেয়। ফলে বুকের দুধ ক্রমে শুকিয়ে যায়।
লেখক : প্রণব কুমার চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, শিশু বিভাগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল