প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশের জাল অনুমতিপত্র ও আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্সের (এএসএফ) জ্যাকেটসহ এক ভুয়া সিনিয়র সচিব ও তার ছেলেসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-পূর্ব)। শনিবার বিকালে সবুজবাগের তরিক হাকিম টাওয়ারের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কুদ্দুছ ফকির এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই চক্রটি প্রভাব খাটিয়ে নানা অপরাধ করে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর সবুজবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ওসি আবদুল কুদ্দুছ ফকির বলেন, ‘এই ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় আমাদের থানায় একটি মামলা (মামলা নং-৩৪) রুজু হয়েছে। মামলার বাদি ডিবির উপ পরিদর্শক (এসআই) আনছার আলী, ডিবি মামলাটি তদন্ত করছে।’
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও প্রতিরোধ পূর্বটিম সবুজবাগ থানার একটি জিডির সূত্র ধরে শনিবার বিকালে অভিযানে যায়। এরপর গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে, সামনের গ্লাসের ড্যাস বোর্ডে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোগো লাগানো একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-৩১-৫৪৬৫) সবুজবাগ থানার ২১৩, তরিক হাকিম টাওয়ারের সামনে রাস্তায় আছে। দ্রুত ডিবি টিম অন্য পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বিকাল ৬টার দিকে সেখানে যায়। পুলিশ সেখানে গিয়ে গাড়ির ভেতরের দুই ব্যক্তির কাছে গিয়ে পুলিশ পরিচয় জানতে চাইলে একজন নিজেকে খন্দকার সাকিব আহম্মেদ (১৮) বলে পরিচয় দিয়ে জানায় তার বাবা খন্দকার দিলদার আহমেদ। তিনি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সিনিয়র সচিব। বর্তমানে তিনমাস ধরে তিনি এলপিআর-এ আছেন। সাকিবের সঙ্গে ইসমাইল হোসেন নামে অপর এক ব্যক্তি ছিলেন যার গায়ে এএসএফ ব্যবহৃত জ্যাকেটের অনুরূপ জ্যাকেট ছিল। সে নিজেকে খন্দকার দিলদারের দেহরক্ষী হিসাবে পরিচয় দেয়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এসময় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকার করে যে, তারা নিজেদের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এরপর পুলিশ প্রাইভেটকারটিতে তল্লাশি করে মটোরলা এমটিপি-৮৫০ মডেলে একটি অ্যান্টেনা ভাঙা সরকারি ওয়ারলেস, চালু অবস্থায় দু’টি ওয়ারলেস, সাকিব ও ইসমাইলের নামে তাদের ছবি সম্পর্কিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশের অনুমতিপত্র, স্টিল বডি একটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করে। এছাড়াও প্রাইভেটকারটির সামনে বামপাশে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একনম্বর গেটের স্টিকার, ড্যাশবোর্ডে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গণপ্রজাতন্ত্রীর বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম স্ট্যান্ড উদ্ধার করে।
ডিবি পুলিশ জানায়, এরপর বিষয়টি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের জানানো হলে আসামিদের দেওয়া উত্তর বাসাবোর তাদের বর্তমান ঠিকানায় পুলিশ রওয়ানা দেয়। এসময় পথের মধ্যে উত্তর বাসাবোর ছায়াবিথীর গলির মুখে সাকিবের বাবা খন্দকার দিলদার আহম্মেদ পুলিশের সামনে পড়ে যায়। তখন তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে সচিব পরিচয় দেন। তবে তাদের দেওয়া পরিচয়ের কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি। গ্রেফতারকৃত খন্দকার সাকিব আহম্মেদ ও তার বাবা খন্দকার দিলদার আহম্মেদ সবুজবাগের মধ্যবাসাবোর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ছায়াবিথী ৪৭/বি নম্বর ভবনে থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের যাত্রাপুর।
অপরদিকে, গ্রেফতারকৃত মো. ইসমাইল হোসেন রাজধানীর মুগদায় থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ।