নিজস্ব প্রতিবেদক: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় ব্যবহার করে আশাশুনিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রসুল বিপ্লবের বিরুদ্ধে। তিনি প্রভাব খাটিয়ে তার বোনসহ অন্যদের মাধ্যমে ওই জমি দখল করে রেখেছেন বলে দাবি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের। আইনগত নির্দেশ পেয়েও তিনি সে জমির দখল ছাড়ছেন না। উল্টো দখলকারীরা তাদের ভারতে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে গতকাল সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে। যদিও ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রসুল বিপ্লব বলছেন, তার বিরুদ্ধে এগুলো সব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তার উত্থান সইতে না পেরে কেউ কেউ তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। তাদের উষ্কানীতেই এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে তার দাবি।
শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন করে বিপ্লবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন আশাশুনি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ। তাদের দাবি, গোলাম রসুল বিপ্লব একজন মাদ্রাসা ছাত্র ছিলেন এবং সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতেন। কখনও তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্যও ছিলেন না অথচ কীভাবে তিনি ঢাকায় যেয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হয়ে পড়েছেন তা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে তারা আরও বলেন তিনি নিজের পরিচয় খাটিয়ে আশাশুনি এলাকার হিন্দুদের জমি দখল করানো ছাড়াও নানা অপকর্ম করছেন। আগামী রোববার তারা তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবেন বলে ঘোষণা দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আশাশুনি উপজেলার সবদলপুর গ্রামের পরিমল রায় তার পৈত্রিক সূত্রে সাত একর ১৪ শতক জমি লাভ করেন। দীর্ঘকাল যাবত তিনি ওই জমিতে দখলে থাকলেও আশাশুনির কাদাকাটির রামচন্দ্রপুরের গোলাম রসুল বিপ্লব (বর্তমানে সহ-সভাপতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ) প্রভাব খাটিয়ে তা তার বোন আকলিমা খাতুন ও অন্যদের নামে বন্দোবস্ত করিয়ে নেন। পরিমল রায় এর বিরুদ্ধে আইন আদালত করে সর্বশেষ হাইকোর্ট থেকে ডিসিআর বাতিলের আদেশ লাভ করেন। কিন্তু তার মধ্যে হঠাৎ প্রভাব খাটিয়ে গোলাম রসুল বিপ্লব তার বোন আকলিমা, মিজানুর রহমান, হাফিজুল ইসলাম ও শংকর সরকারের পক্ষে জমি দখলে সহায়তা করেন। তারা বলেন সুপ্রীম কোর্ট নি¤œ আদালতের আদেশ বাতিল ঘোষণা করা সত্ত্বেও তারা পুরো জমি জবর দখল করে রেখেছেন। তারা জমির ঘেরা বেড়া দিয়েছেন এবং পরিমল রায়ের কেউ সেখানে গেলে খুন করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। গোলাম রসুল বিপ্লব ঢাকায় বসে কলকাটি নাড়ছেন দাবি করে তারা বলেন, তিনি আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, গোলাম রসুল বিপ্লব ছাত্রলীগে একজন অনুপ্রবেশকারী। তারা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান। এ ব্যাপারে তারা জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন আশাশুনি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি নীলকন্ঠ সোম, সেক্রেটারি রনজিত বৈদ্য, অসীম চক্রবর্তী, গৌর পদ সরকার, পরিমল কুমার রায় রিক্তা রায় প্রমুখ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি গোলাম রসুল বিপ্লব ছাত্রলীগ করতেন না এবং তিনি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন স্বীকার করলেও শিবিরের রাজনীতির সাথে তিনি কখনও জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, “সুশঙ্করের পরিবার ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৬ বছরওই জমির রাজস্ব দিয়ে আসছিল কিন্তু তাদেরকে প্রতারিত করে পরিমলের পরিবার জমি জবরদখল করে আসছিল। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর সরকার ওই জমির কোন রাজস্ব পাচ্ছিল না। পরবর্তীতে আশাশুনি সহকারী কমিশনার(ভূমি) অফিসের মাধ্যমে বিগত প্রায় ১৮ বছরের রাজস্ব পরিশোধ করে ৭ জনকে সরকার ৩ বিঘা করে ২১ বিঘা জমি ভাগ করে দেয়। এক্ষেত্রে আমি কোনো জমি দখল করিনি। বরং একটি বঞ্চিত পরিবারকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছি।”
পূর্ববর্তী পোস্ট