‘ওরে… ইশ… আহারে… আরেকটু…!’
মিরপুরে আজ শেষ আধ ঘণ্টায় এ শব্দগুলোই ঘুরে ফিরে আসছিল বারবার। এক একটি বল করছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা সাকিব আল হাসান। আর সে বল বোলারদের হাত থেকে বেরোনো মাত্র রূপ নিচ্ছিল অন্য কিছুতে। বল উইকেটে পড়া মাত্র সেটা ছোবল দিচ্ছিল, সে ছোবলে কখনো কাবু হচ্ছেন ব্যাটসম্যান কখনো বিষটুকু সহ্য করে নিচ্ছিলেন স্মিথ-রেনশরা। ৯ ওভার শেষে অতিথিদের স্বস্তি দিয়ে প্রথম দিনের যবনিকা টানলেন আম্পায়াররা। তবে ততক্ষণে স্কোরকার্ডের ডান দিকে ৩ লেখা হয়ে গেছে। ৩ উইকেট হারিয়ে ১৮ রানে দিন শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের চেয়ে এখনো ২৪২ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা।
দিনের শেষ দুই ঘণ্টা মিরপুরে আজ ত্রাস ছড়িয়েছেন স্পিনাররা। প্রথম দুই সেশনে মাত্র পাঁচ উইকেট পড়তে দেখা গেলেও, শেষ সেশনেই সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ হতে বসেছিল। অস্ট্রেলিয়ার তিন উইকেট হারানোর কথা তো আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশও শেষ বিকেলের পাগলামিতে হারিয়েছে পাঁচ উইকেট। এর মাঝে শেষ চার উইকেট ২০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশে। নাথান লায়ন ও অ্যাশটন অ্যাগারদের সামনে ব্যাটসম্যানদের এমন আত্মসমর্পণেই ২৬০ রানে থেমে গেল বাংলাদেশ।
এ স্কোরে মন খারাপ হতে পারত। দুঃখ জাগতে পারত। কিন্তু লায়নদের ওভাবে ফোঁসফাঁস করতে দেখেই আশা জেগেছিল সবার। এমন পিচে মিরাজ তো নিশ্চয় কিছু করে দেখাবেন। প্রথম দিনেই কালো হয়ে ওঠা পিচ, কখনো বল মাটির সঙ্গে কথা বলে কখনো ব্যাটসম্যানের পাঁজর ছুঁতে চায়। এমন উইকেট বিশ্বের যে কোনো স্পিনারের স্বপ্নের উইকেট। মিরাজ-সাকিবের স্পিন জুজুর অপেক্ষায় বিরতিটা কাটালেন সবাই।
কিন্তু দল নির্বাচনে চমক দেখানো বাংলাদেশ দলের বিস্ময় জাগানো থামেনি শেষ বিকেলেও। বল তুলে দেওয়া হলো শফিউলের হাতে। সাকিব-তামিমের আউট, অফ স্পিনে ডেভিড ওয়ার্নারের দুর্বলতা কিংবা অন্ধকার হয়ে আসা আকাশও পারেনি মুশফিকুর রহিমের একজন পেসারের হাতে বল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে।
পরের ওভারেই মিরাজ দেখালেন সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। সেটা স্বীকার করে নিয়ে সাকিবকে নিয়ে আসা হলো পঞ্চম ওভারে। এর আগেই অবশ্য বেশ কয়েক ‘আহা’ ‘ইশ্’ বলে হাহাকার সৃষ্টি করা মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন মিরাজ। তবে অপর প্রান্তে স্পিন আসার পরই দিলেন প্রথম ধাক্কা। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লু করে দিলেন ওয়ার্নারকে। কিন্তু রিভিউ নেওয়ার পর দেখা গেল প্যাডে আঘাত হানার আগে বল ছুঁয়ে গেছে ওয়ার্নারের ব্যাট। পরের বলে অবশ্য ওই ব্যাটও বাধা হতে পারেনি। এবার ঠিকই ব্যাটকে ফাঁকি দিল মিরাজের বল। ৯ রানে প্রথম ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া।
তিন বল পরেই দ্বিতীয় ধাক্কা। এমন স্পিন সহায়ক পিচে কোনোভাবেই যেন স্ট্রাইকে থাকতে চাইলেন না উসমান খাজা। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে অযথা বের হলেন উইকেট থেকে। মুশফিক-সৌম্যের যৌথ প্রযোজনা তাঁকে আর ফিরতে দিল না উইকেটে।
এর পরে রাতটা পার করতে এলেন নাইট ওয়াচম্যান নাথান লায়ন। সাকিবের আর্মার নিশ্চিত করে দিল লায়ন রাতটা পার করবেন ঠিকই, তবে সেটা দ্বিতীয় ইনিংসের কথা ভাবতে ভাবতে। ৭ ওভারে ১৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর তাই রেকর্ড নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া শুরু হয়ে গেল। অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন স্কোর গুলো জেনে নিতে চাইলেন অনেকেই। তবে শেষ দুই ওভার নিরাপদে কাটিয়ে দিয়ে স্টিভ স্মিথ ও ম্যাথু রেনশ সে আলোচনা একটু স্তিমিত করে দিয়েছেন।
তবু যদি জানার ইচ্ছে থাকে, তবে বলেই ফেলা যাক! ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৬ রানে অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। যদি সেটা ভেজা পিচের যুগ এবং পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে বলে উড়িয়ে দিতে চান, তবে আরেকটি তথ্য জানিয়ে দেওয়া যাক। স্পিনবান্ধব এশিয়াতে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন স্কোর কিন্তু এখন আর অসম্ভব মনে হচ্ছে না। ১৯৫৬ সালে করাচিতে ৮০ রানে অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মিরাজ-সাকিবের পক্ষে সম্ভব হবে এ রেকর্ড নতুন করে লেখানোর? মিরপুরের উইকেট বলছে অসম্ভব নয় কোনো কিছুই!