অনলাইন ডেস্ক: বিশ্ব পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড ব্রিটিশ ফিউজিটিভ’ এর সংক্ষিপ্ত ২৪ জনের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের আলবদর নেতা চৌধুরী মঈনুদ্দীনের নাম। বেশ আগেই মঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করলেও অজানা কারণে তাকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নিচ্ছে না ইন্টারপোল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যার দায়ে দণ্ডিত চৌধুরী মঈনুদ্দীনের অবাধ ও বিলাসী জীবন নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন ছেপেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’।
বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দিনের আলোয় কুখ্যাত এই আলবদর নেতার নির্বিকার ঘুরে বেড়ানোর বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করে তাকে ধরতে ইন্টারপোলের আদৌ কোনো তৎপরতা আছে কি না, সে ব্যাপারেই প্রশ্ন করেছে পত্রিকাটি। ম্যাট উইলকিনসন নামের দ্য সানের এক প্রতিবেদকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সাবেক এনএইচএস নেতা চৌধুরী মঈনুদ্দীন (৬৯) লন্ডনের শহরতলীতেই দিব্যি বসবাস করছে। নর্থ লন্ডনের সাউথগেটে ১ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড মূল্যমানের এক বাড়িতে সহজেই তাকে খুঁজে পায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম সান।
মঈনুদ্দীনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে সান জানতে পেরেছে যে, চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে বাজার করতে দেখা যায়, দেখা যায় মসজিদে যেতে। ইন্টারপোলের তো খুব বেশি খোঁজার প্রয়োজন নেই। এছাড়া নিজ বাসায় দ্য সানের সঙ্গে কথা বলার সময়, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার বিষয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করতে দেখা গেছে মঈনুদ্দীনকে। সানকে তিনি বলেন, এটা পুরাই ‘রাবিশ’। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকে ‘প্রহসন’ বলেন তিনি। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বলেও জানান।সান আরো বলছে, মুক্তিযুদ্ধের পরই ব্রিটেনে পালিয়ে আসেন মঈনুদ্দীন। ব্রিটেনের নাগরিকত্ব লাভ করেন। স্ত্রী ফরিদার (৫৭) ঘরে তার চার সন্তান রয়েছে। ব্রিটিশ প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে মঈনুদ্দীনের একটি ছবিও রয়েছে, যা তোলা হয়েছিলো লেইসেস্টারশায়ারে একটি ইসলামিক ইভেন্টে। লন্ডনে জামায়াতের সংগঠন দাওয়াতুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক দাওয়াতের বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। এছাড়া তিনি সেখানকার ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের একজন সাবেক পরিচালক, মুসলিম এইডের ট্রাস্টি এবং টটেনহ্যাম মসজিদ পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক চৌধুরী মঈনুদ্দীন। বাংলাদেশে তার ঠিকানা ফেনীর দাগনভূঞার চানপুর গ্রাম।১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। সেই নীলনকশা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয়া দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈনুদ্দীন। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ আলবদর বাহিনীর ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ছিলেন আশরাফুজ্জামান খান। আর চৌধুরী মঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’। আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বলেও জানা যায়।২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর মুঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান। জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের এই দুই কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন শিক্ষক, ছয়জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যা করেন বলে রায়ে উঠে আসে। মুঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার আদেশ দেন। এই আসামি আত্মসমর্পণ অথবা গ্রেপ্তারের পর তার সাজা কার্যকর করা হবে বলেও জানান ট্রাইব্যুনাল। তারপরও আত্মস্বীকৃত এবং দণ্ডপ্রাপ্ত এই যুদ্ধাপরাধী একাত্তরে ‘পাকিস্তানের অখণ্ডতার’ পক্ষে থাকার কথা নিজেই নিজের ওয়েবসাইটে পোস্ট করেন। দ্য সান।