কেএম রেজাউল করিম : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন হত্যা চেষ্টার ৫দিন অতিবাহিত হলেও মোটিভ এখনো উদ্ধার হয়নি এখনো। তবে পুলিশ বলছে হত্যা চেষ্টার কিছু নেপথ্য কারণ জানা গেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন মটরসাইকেল যোগে পারুলিয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হতে কয়েক গজ দুরে সখিপুর রাজারবাড়ি মোড় এলাকায় পৌঁছালে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে গতিরোধ করে পরপর ৩টি গুলি ছোড়ে। দূর্বিত্তদের গুলিতে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন (৪৫) গুরুত্বর আহত হন। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতনের বুকের ডানপাশে পাজড়ের নিচে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরদিন বুধবার শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় তাকে। উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে সখিপুর কলেজ মাঠের পাশে জামায়াতের কেন্দ্রিয় নেতা মাও. দেলোয়ার হুসাইন সাঈদীর ফাঁসীর রায় ঘোষণার পর জামাত-শিবির কর্তৃক ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর হামলা চালিয়ে মারাত্বক ভাবে জখম করে। একপর্যয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। সাম্প্রতিক সে সময়ের হত্যার চেষ্টায় দায়েরকৃত মামলাটির চার্জশিট সম্পন্ন করেছে পুলিশ। ঐ মামলার অনেক আসামী এখনো ধরাছোয়ার বাহিরে রয়েছে। তবে, ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যাচেষ্টা নেপথ্যে খাটাল না মাদক না জমি। এই নিয়ে ধ্রুমজাল থাকলেও চেয়ারম্যান রতনকে হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে খাটাল, চিংড়ি ঘের, জমি না মাদক- এ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের তদন্তে এগিয়ে চলেছে। এই কয়টি বিষয়ের মধ্যে দেবহাটায় একটি গরুর খাটাল (ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আনার পর ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অস্থায়ীভাবে রাখার স্থান) স্থাপন নিয়ে রতনের সঙ্গে কিছু লোকের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। অতি সম্প্রতি রতন সমর্থক খাটালটির অনুমোদন পান। এই খাটালের অনুমতি চেয়ে যারা আবেদন ও তদবির করছিলেন তারা হলেন, বারী মোল্লা, আব্দুর রহিম ও লাভলু বিশ্বাস। রতনকে হত্যা চেষ্টার পেছনে খাটালের বিষয়টি বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এছাড়া এলাকার চিংড়ি ঘের নিয়ে চেয়ারম্যান রতনের সাথে দ্বন্দ্ব চলছিল কারও কারও। কিন্তু ২ জানুয়ারি ঘটনাস্থল থেকে ৩টি গুলির খোসা উদ্ধারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধীক কর্মকর্তারা সেটি পার্শ্ববর্তীদেশ ভারত থেকে চোরাই পথে আনা হয়েছে বলে তাৎক্ষণিক ধারণা করেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ভারত থেকে নদীপথে গরুর সাথে দেশে প্রবেশ করছে ফেনসিডিল, ভারতীয় মদ, গাঁজা ও বিড়ি তৈরির পাতা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, অবৈধ্য অস্ত্র, বিষ্ফোরক সামগ্রি, ভাইরাসযুক্ত মাছের রেনু ও ডিম, অনুন্নত পোল্ট্রি’র বাচ্চা, গার্মেন্ট্স সামগ্রী, মেশিনারিজ পার্টস। একই পথে ভারতে পাচার হচ্ছে কাঁষা-পিতল, বিভিন্ন মূল্যবান ঔষধ, সাবান-ডিটারজেন্ট ও পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ। শুধু তাই নয় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজের মিথ্যা প্রলোভনে প্রতিনিয়ত পাঁচার হচ্ছে নারী ও শিশু। এদিকে বর্তমানে উপজেলার চোরাঘাট সমূহ উন্মুক্ত থাকলেও প্রশাসনের চোখে না পড়ায় রাম রাজত্ব কায়েম করতে মাঠে নেমেছে চোরা ঘাটমালিক ও চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের গডফাদাররা, পাশাপাশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রশাসনের নাম করে চাঁদা আদায়কারী দালালচক্র। আর চোরাই পথে দেশে আসা এসব মাদকদ্রব্্য, বিষ্ফোরক, মেশিনারি পার্টস, গার্মেন্টস সামগ্রী ভাইরাসযুক্ত মাছের রেনু, অনুন্নত পোল্ট্রি’র বাচ্চা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচার হচ্ছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভারত থেকে গরু আনার জন্য ভারতীয় রাখাল ব্যবহারের কথা থাকলেও গরু আনার জন্য প্রতিদিন শত শত লোককে চোরাঘাট দিয়ে নদী পার করে ভারতে পাঠিয়ে এবং সেখান থেকে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য দেশে নিয়ে এসে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন অনেকে। এ ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত থেকে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে নেতা পরিচয় দিয়ে চোরাঘাট মালিক ও চোরাকারবারীদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করা হচ্ছে বলেও জানাগেছে। আর এসব মাদকদ্রব্যের করাল গ্রাসে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এলাকার যুব সমাজ। এসব চোরাঘাট উন্মুক্ত থাকায় প্রতিনিয়ত দেশ থেকে পাঁচার হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সম্পদ আর তার পরিবর্তে ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করছে বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য। উপজেলার সীমান্তবর্তী এসব চোরাঘাট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করছে এসব ঘাটমালিক ও ব্যবসায়ীরা। যার কারনে খাটাল নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলছেন, দেবহাটার ওই এলাকায় ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক চোরাচালান, কেনাবেচা ও ব্যবহারের অনেক ঘটনা রয়েছে। চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। তাকে হত্যা চেষ্টার পেছনে মাদকের বিষয়টি রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছেন পুলিশ। এদিকে, উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে হত্যার চেষ্টার প্রতিবাদে ৩ জানুয়ারি সখিপুর মোড়ে সমাবেশ করা হয়েছে। অবিলম্বে এই নৃশংস ঘটনার প্রকৃৃত রহস্য উদঘাটন করে আসামিরা সনাক্ত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি।
বিষয়টি নিয়ে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী কামাল হোসেন জানান, ২ জানুয়ারি রাতে সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ফারুক হোসেন রতন হত্যার চেষ্টার ঘটনার রবিবার ৫দিন অতিবাহিত হলেও তার পরিবার বা দলীয় সংগঠন থেকে কোন অভিযোগ কিংবা এজাহার দায়ের করা হয়নি। তাছাড়া তার উপর হামলার পিছনে অসংখ্য ক্লু-থাকায় তদন্ত একটু বিলম্বিত হচ্ছে। তবে, প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট