চাহিদা মেটাতে হিমায়িত মাংস আমদানি না করে ব্রাহামা জাতের গরুর ‘বীর্য’ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘বিফ ক্যাটল উন্নয়ন’ প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় ‘ব্রাহামা’ জাতের গবাদি পশুর বীর্য আমদানি করে মাংসল জাতের গরু দেশেই উৎপাদন করা হবে। যা থেকে দেশে মাংসের চাহিদা মেটানো যাবে।
সম্প্রতি চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানির আবেদন করেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জানিয়েছেন, ‘দেশে লাল মাংসের চাহিদা মেটাতে অধিক মাংস উৎপাদনে সক্ষম ব্রাহামা জাতের মাংসল গরু উৎপাদনে বীর্য আমদানি করা হবে। আর এই জাতের গরু উৎপাদনে যারা খামার প্রতিষ্ঠা করবে তাদের সহায়তা দেবে সরকার। ইতোমধ্যেই সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে।’
প্রসঙ্গত, সঠিক খাদ্য ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন করা ব্রাহামা জাতের গরুর গড় ওজন এক টন (এক হাজার কেজি) পর্যন্ত হয়। ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে ‘ব্রিড আপগ্রেডেশন থ্রু প্রেজেনি টেস্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘প্রুভেন বুল’ উৎপাদন করছে। এই ষাঁড়ের মাধ্যমেই গবাদি পশুর বীর্য উৎপাদন করা হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশে গরুর বীর্য উৎপাদন হয় ২৫ লাখ ৮৪ হাজার ডোজ। এর মধ্যে হিমায়িত ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ও তরল ৭ লাখ ৮৭ হাজার লাখ ডোজ। এই বীর্য ব্যবহারের মাধ্যমে ওই বছর গাভী উৎপাদন হয় ২২ লাখ ৭১ হাজারটি। ওই বছরের পর থেকে প্রতিবছরই গরুর বীর্য উৎপাদন বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ লাখ ৮২ হাজার ডোজ। এর মধ্যে হিমায়িত ৩০ লাখ ডোজ ও আর তরল বীর্য ১১ লাখ ৮২ হাজার ডোজ। যা ব্যবহার করে দেশে গতবছর গাভী উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ ৬৮ হাজারটি।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত গরুর মাধ্যমে যদি মাংসের চাহিদা মেটানো যায় তাহলে কেন তা আমদানি করতে হবে? গরুর মাংস আমদানির অনুমতি দিলে দেশের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সরকার গরুর মাংস আমদানি না করে ব্রাহামা জাতের গরুর বীর্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘গরুর মাংস আমদানির সিদ্ধান্ত সরকার নেয়নি। ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে গরুর মাংস আমদানির আবেদন করেছিল। কিন্তু আমরা তা আমলে নেইনি।’
গরুর মাংস আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শুধু ভারত কেন, কোনও দেশ থেকেই গরুর মাংস আমদানির অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না। এতে দেশের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এক সময় ভারতের গরু না এলে কোরবানি হতো না। কিন্তু এখন দেশে উৎপাদিত গরু দিয়েই কোরবানি হচ্ছে। তাই মাংসের চাহিদা মেটাতে সরকারের উন্নত জাতের গরুর বীর্য আমদানির সিদ্ধান্ত প্রশংসার দাবি রাখে।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রাণীজ আমিষের প্রধান উৎস গরুর মাংস। বছরে দেশে চাহিদা আছে ৭১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন মাংসের।