একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা দলের মনোনয়ন পেতে পারেন তাঁদের অনেককে আগাম ‘সবুজ সংকেত’ দিচ্ছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির অংশগ্রহণে জোর লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এমন উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কমপক্ষে ১০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় দলীয় আনুষ্ঠানিকতার পর। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে চূড়ান্ত করে চিঠি দেওয়া হবে প্রার্থীদের।
দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নিশ্চয়ই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন এঁদের দিয়ে ভালো ফল পাবেন তাই তাঁদের ইঙ্গিত বা গ্রিন সিগন্যাল দিচ্ছেন। যাঁর সম্ভাবনা বেশি আছে, অনেক ক্ষেত্রে তাঁকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সংখ্যাটা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংখ্যাটা বলতে পারব না। তবে ভালো পারসেন্টেজ।’ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা যেভাবে ইঙ্গিত পেয়েছেন সেভাবেই সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘এটি আন-অফিশিয়ালি করা হচ্ছে। যাঁদের আসনে ভালো ফল ছিল, যাঁদের আসন নিয়ে আমরা আশাবাদী, তাঁদের একটা সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। এই সিগন্যাল নেত্রী দিচ্ছেন। বেশ কিছু আসনে নেতাদের নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’ সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে এমন আসনের সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনুমানিক ১০০ হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম আতিক। আসন্ন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যও দলের সাবেক দুই মেয়রকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও অনুরূপ কৌশল অনুসরণ করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং পটুয়াখালী-১ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী আফজাল হোসেন গত বুধবার বলেন, ‘সভানেত্রী নৌকা মার্কার বিজয়ের জন্য আমাকে কাজ করতে বলেছেন। আমি নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
চাঁদপুর-১ আসনে নৌকার জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনকে। তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার বাসিন্দা একজন সাবেক ছাত্রনেতাকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে সবুজ সংকেত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সাবেক ছাত্রনেতা নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আরো যাঁরা দলীয় সভাপতির সবুজ সংকেত পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে আছেন এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), অধ্যাপক আবু সাইয়িদ (পাবনা-১), ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১), মতিউর রহমান (রাজশাহী-১), আসাদুজ্জামান আসাদ (রাজশাহী-৩), অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ (নাটোর-১), জলি চৌধুরী (নাটোর-২), সালমান এফ রহমান (ঢাকা-১), ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন (ঢাকা-৭)। এ ছাড়া জোটগতভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আভাস পেয়েছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা (ঢাকা-১৭)।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সর্বশেষ অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে জরিপ কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগেও এ ধরনের জরিপ করা হয়েছিল। সরকারি সংস্থার বাইরে বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের জরিপকাজে অংশ নেয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক আগে থেকেই জরিপ চালানো হচ্ছে। এটি নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চলবে বলে জানা গেছে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করে থাকে দলের মনোনয়ন বোর্ড। পদাধিকার বলে ওই বোর্ডের প্রধান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সুপারিশের বিষয়টিও আমলে নেয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় ফরম কিনে মনোনয়ন বোর্ডের মুখোমুখি হতে হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বোর্ডের সদস্যরা তাঁদের সাক্ষাৎকার নেন। এরপর মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করলে শেখ হাসিনার সই করা চিঠি চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীদের হাতে দেওয়া হয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছিলেন দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সেখানে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনার সই করা আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চিঠি।
সূত্র: কালের কণ্ঠ।