তরিকুল ইসলাম লাভলু: ষড়ঋতুর আপরুপ লীলা নিকেতন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। অপূর্ব রূপ আর অফুরান্ত সম্ভার নিয়ে একে একে আবির্ভূত হয় ছয়টি ঋতু। বছরের বারো মাসে পৃথিবীর আর কোন দেশে ছয় ঋুুর অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না। এক এক ঋতুর আবির্ভাবে প্রকৃতিতে নানা পরিবর্তন ঘটে। আর এই ছয়টি ঋতুতে বাংলাদেশের প্রকৃতি নতুন নতুন সাজে সু-সজ্জিত হয়ে তার রুপের মহিমা প্রচার করে। একেরপর এক আসে গ্রীষ্ম, বর্ষা, সরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত প্রতিটি ঋতুই তার স্বকীয়তা ও প্রাচুর্যে অুুলনীয় এবং পরিপূর্ণ। গ্রীষ্মেও খরতাপ, বর্ষার আবিরাম বর্ষণ, শরতের মেঘ মুক্ত নীল আকাশ, হেমন্তের কুয়াশা, শীতের সকাল ও বসন্তের বৈচিত্রময় অপরূপ বাংলার মানুষের মনকে মুগ্ধ করে তোলে। তেমনি শরতের বিদায়ের পর নিরবে আসে হেমন্তকাল। ভোরের শিশিরের পবিত্রতা এবং দিনে রৌদ্রের উজ্জলতায় শীতের আগমনের কথা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে। হেমন্ত যেন ধবল কয়াশার আবরণে মুখ ঢেকে এক নিঃস্বঙ্গ সাধনায় নিমগ্ন হয়। সেই সাধনা যেন বাংলার কৃষকের ফসল ফলাবার সাধনা। মাঠে মাঠে ধান পাকে। হেমন্ত ধানের সোঁদা গন্ধে কৃষকের আঙিনা মাতোয়ারা হয়। কৃষকের কর্মব্যাস্ততার যেন শেষ নেই এই হেমন্তে। মাঠে মাঠে ফসল কাটার গানের মধ্য দিয়ে শীতের আভাস প্রদান করে হেমন্ত আস্তে আস্তে বিদায় নেওয়ার সাথে সাথে চলে আসছে শীতের আগমণ। আর এই শীত আসছে উত্তরের হিমেল হাওয়া নিয়ে। শুষ্ক কঠিন ও রিক্ততার বিষাদময় প্রতিমূর্তিরুপে শীতের আবির্ভাব ঘটে। এ সময় সকল গাছপালা রুক্ষ ও বিবর্ণ হয়ে ওঠে। হেমন্তকে বিদায় জানিয়ে শীত আসছে। শুরু হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ তোলার কাজ। সারা দেশের ন্যায় তাই যেন দক্ষিণ জনপদের সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার গাছিরাও বসে নেই, তারা প্রতিটি মূহুর্ত রস সংগ্রহের কাজে ব্যাস্ত রয়েছেন। খেজুরের এই রস দিয়ে শীতের সকালে পিঠা,পায়েস,ক্ষীর খাওয়ার মজায় যেন অন্য রকম শীতের সকালে গরম কাপড়,কাঁথা,লেপ গায়ে জড়িয়ে শীতের সকাল উপভোগ করে গ্রামের মানুষ। দেখা গেছে, আমাদের গ্রাম বাংলায় অতীতে খেজুর রসের যে সুখ্যাতি ছিল তা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। সাতক্ষীরা এলাকা বর্তমান মাছে সমৃদ্ধশালী। ফসলী জমির বেশিরভাগ এখন মাছ চাষীদের দখলে। তাই যেন খেজুর গাছে বিলুপ্তির সুর বাজছে। এখন আর আগের মতো মাঠও নেই, নেই সারি সারি এই খেজুর গাছও। এক সময় এলাকায় হাজার হাজার খেজুর গাছ থাকলেও আজ তার সংখ্যা অনেকটাই কম, তারপরেও গ্রামের মাঠে আর গ্রাম্য মেঠো পথের ধারে কত গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে।
পূর্ববর্তী পোস্ট