সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে বলে-কয়ে জেতার মতো দল এখনো হয়ে ওঠেনি বাংলাদেশ! পারফরম্যান্সের কথা চিন্তা করলে টি-২০তে টাইগাররা সবেমাত্র শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিচ্ছে! সেদিক দিয়ে ভারতীয় দল টগবগে যৌবনে। বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো নামি ক্রিকেটার দলে নেই তো কি হয়েছে? ওয়ানডের একাধিক ডাবল সেঞ্চুরিয়ন রোহিত শর্মা আছেন, মারকুটে শেখর ধাওয়ান আছেন। ভারতের তরুণ ক্রিকেটাররাও দুর্দান্ত। আজকের ফাইনালে এই ভারতকে কি রুখতে পারবে বাংলাদেশ?
ক্রিকেট অনিশ্চতার খেলা। তিন ফরম্যাটের মধ্যে সবচেয়ে অনিশ্চয়তা বুঝি টি-২০তেই। এক ওভারে অনেক সময় এক বলেও ম্যাচের চিত্রনাট্য পাল্টে যেতে পারে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটি। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের শেষ ছক্কার আগ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য দুলেছে পেন্ডুলামের মতো। কখনো বাংলাদেশের দিকে কখনো বা শ্রীলঙ্কার দিকে। তাই আজ ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে হয়তো রোমাঞ্চকর ‘কিছু’ অপেক্ষা করছে !
অনিশ্চয়তার টি-২০তে যেকোনো দলই জিততে পারে। তবে ‘মোমেন্টাম’ বলে একটা কথা চালু আছে ক্রিকেটে। সেখানে বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ। শেষ তিন ম্যাচে কী দুর্দান্তই খেলেছে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচেই জিতেছে। তবে একটুখানি বেহিসেবি হওয়ার কারণেই ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে হাতের মুঠোয় থেকে জয় হাত ছাড়া হয়ে গেছে।
শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যোগ দেওয়ায় দলের চেহেরাই পাল্টে গেছে। ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় যেন আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি খেলে যাচ্ছে। শেষ ম্যাচে মাঠেই তা দেখা গেছে। তবে শ্রীলঙ্কাকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারানোর পর বাংলাদেশ যেন আরও উজ্জীবিত।
কিন্তু প্রতিপক্ষ ভারত বলেই যত দুশ্চিন্তা! কেন না সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে এখনো প্রতিবেশীদের হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা দিতে পারেনি বাংলাদেশ। টি-২০তে এ পর্যন্ত সাতবারের দেখায় প্রতিবারই হেরেছে টাইগাররা। সব চেয়ে বেশি ক্ষত তৈরি করেছিল ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে চিন্নাস্বামী ১ রানে হারটি। জেতা ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। একই বছর ঘরের মাঠে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে ভারতের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা। আজ সময় এসেছে অতীতের সব হিসেব-নিকেশ বুঝিয়ে দেওয়ার। টাইগারদের সে সামর্থ্য আছে—কেবল প্রয়োজন মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলা।
নিদাহাস ট্রফিতে ‘অলিখিত’ সত্য, যারা টস জিতে তারা বাড়তি সুবিধা পায়। ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচ ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করা দল হেরেছে। তবে ভারতীয় তারকা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিক মনে করেন পরে ব্যাটিং করা খুব সহজ একথাও শতভাগ সত্য নয়। তিনি বলেন, ‘টার্গেট তাড়া করা খুব সহজ নয়। আমি জানি না, এখানকার উইকেট কেমন? তবে যদি শিশির পড়ে তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দল সুবিধা পায়। যদি শিশির না পড়ে তাহলে আশা করি একটি দুর্দান্ত লড়াই হবে ফাইনালে। সেক্ষেত্রে উইকেটে টার্ন থাকবে, খেলা কঠিন হয়ে যাবে। যে দলের বোলাররা ভালো করবে তাদের ফাইনালে জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি।’
টি-২০তে আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে ভারত এখন ৩ নম্বরে। আর বাংলাদেশ ১০ নম্বরে। আফগানিস্তানের নিচে টাইগাররা। তবে র্যাঙ্কিং মাঠের খেলায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না তা খুবই ভালো করেই জানে ভারত। সে কারণেই বাংলাদেশকে নিয়ে ভীষণ সতর্ক প্রতিপক্ষ। কার্তিকের ভাষ্য, ‘উপমহাদেশের মাটিতে বাংলাদেশ খুবই ভালো দল। খুবই চালাক দল। তাদের হারানো কঠিন।’
সতর্ক টাইগার ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসানও। যদিও আগের ম্যাচে বেশ মাথা গরম করেছিলেন। আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে ম্যাচ ফি-র ২৫ শতাংশ জরিমানাও গুনেছেন। তবে এ ম্যাচে সে ব্যাপারে বেশ সজাগ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
যেকোনো ফাইনালে ওঠার যেমন অনেক মজা আছে তেমনি কষ্টও কম নয়। সেটা সাকিবের চেয়ে আর কে ভালো বুঝবেন! ২০১২ সালে ঘরের মাঠে এশিয়া কাপের ফাইনালে শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ৩ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর ড্রেসিংরুমের সামনে মুশফিককে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদেছিলেন সাকিব। যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। সব শেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে এই ভারতের বিরুদ্ধে হারের কথাও ভোলেননি সাকিব। বাংলাদেশ বেশ ক’বার ফাইনালে উঠেছে কিন্তু একবারও জিততে পারেনি। তবে এবার আর কাঁদতে চান না সাকিবরা। হেরে বেদনায় নীলও হতে চান না। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ভারতকে হারিয়ে বিজয়ের মাসে বিজয়ের পতাকা উড়াতে বদ্ধ পরিকর টাইগাররা।