আগামী বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ‘ট্যাক্সরেট (করহার) কমানো হতে পারে। এটা নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’ তবে বিদ্যুতের দাম আরো বাড়বে। যতই দিন যাবে বিদ্যুতের দাম বাড়তেই থাকবে। যতটা সম্ভব সহনীয় মাত্রায় থাকে সেটা সরকার দেখবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট নিয়ে আয়োজন করা সরাসরি অনুষ্ঠান ‘কেমন বাজেট চাই’ এর আলোচনাসভায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনের বলরুমে ওই অনুষ্ঠান শুরু হয়। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠান নিবেদন করে আইএফআইসি ব্যাংক।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘এবারের বাজেট নির্বাচনী বাজেট নয়। এবারের বাজেট চার লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো হবে। তা আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ঘোষণা দিয়েছি করপোরেট ট্যাক্স কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া শেয়ার বাজার সম্পর্কে যে অঙ্গীকার ছিল সেটি বাস্তববায়নের চেষ্টা করব। ব্যাংকখাতের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে। যাতে নতুন সরকার সেটি আমলে নিয়ে কাজ করতে পারে। গার্মেন্টস সেক্টর আমাদের দেশকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। সেটিতে বিশেষ নজর সব সময় দিয়েছে সরকার।
সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের ওপর শুল্কারোপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ২০৪১ সালে আর তামাক থাকবে না। তবে মনে রাখতে হবে সিগারেটের আগে বিড়ি ও জর্দা বন্ধ করতে হবে।
দেশে বিনিয়োগের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের পর বিনিয়োগের খাত অনেক উন্নত হয়েছে। এই তিন বছরে এ খাতে আস্থার জায়গাও উন্নত হয়েছে। এছাড়া আমাদের প্রাইভেট সেক্টর বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে। কারণ বিদেশি বিনিয়োগ না থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে না।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমস্যাগুলো কিভাবে দূর করা যায় সে বিষয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, এর জন্য দাম নির্ধারণ করতে হবে। যাতে দামের তারতম্যের জন্য বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত না হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত সব সময় অগ্রাধিকার পায়। কারণ এটি না থাকলে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। তবে বিদ্যুৎখাতের অবস্থা এখন ভালো। কারণ ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে বিদ্যুৎ দরকার সেটির ব্যবস্থা আছে। তিনি বলেন, তবে এ খাতে একটা সমস্যা আছে, সেটি হচ্ছে দাম। এখন গ্যাসের দাম একটু সামান্য পরিমাণে বেড়েছে। এবার আবার বিদ্যুতের দাম বাড়বে। যতই দিন বাড়বে এর দাম বাড়বেই, বাড়তেই থাকবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতেই হবে।
বিনিয়োগ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, শিল্প-বাণিজ্য, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে বিগত দিনের বাজেটের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির পাশাপাশি আসছে বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে।
এবারের আয়োজনে অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শেদ, ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির।
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করলে সেখানে লাভ-লোকশান থাকবে। সেজন্য একটি এক্সিট পয়েন্ট রাখতে হবে। তিনি বলেন, একজন ব্যবসায়ী বলেছেন ঢাকা চট্টগ্রাম ছয় লেন করার কথা। কিন্তু সেটি করলে লাভ হবে না। তার চেয়ে ভালো একটি নির্দিষ্ট রেললাইন করা উচিত শুধু কন্টেইনারের জন্য। তিনি বলেন, সব ব্যাংকের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
নিহাদ কবির বলেন, আমার কষ্টার্জিত টাকা যেন অন্যের ভর্তুকি দিতে চলে না যায়। সেদিকে ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে আমরা সত্যিকার অর্থে বিনিয়োগে উৎসাহিত হব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা যে বিষয়ে আলোচনা করেছেন আমি সেসব বিষয়ে নোট করে রেখেছি।
বিনিয়োগের বিষয়ে সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগকে প্রভাবিত করে। তা থেকে মুক্তি পেতে হলে দীর্ঘ মেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। বিনিয়োগের পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। এটি করতে না পারলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দিয়ে কাজ হবে না।
মুদ্র্রণ শিল্প নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হাসিনা নেওয়াজ বলেন, বিদেশিরা যে টেন্ডার দিচ্ছে তা যেন দেশীয় মুদ্রণ শিল্পগুলোকে দেওয়া হয়। কারণ দেশীয় মুদ্রণ শিল্প এখন অনেক বেশি আন্তর্জাতিক মানের। এ দিকে নজর দেওয়া যায় কিনা?
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, এবারের জিডিপি যেভাবে বাড়ছে তার সাথে রপ্তানির গ্রোথ বাড়ছে না। গতবার জিডিপির সাথে রপ্তানির গ্রোথ ছিলো ২২ ভাগ। এবার সেটি ১৬ ভাগ হয়েছে। তিনি বলেন, রপ্তানি জিডিপি যেন বাড়ানো যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবারের বাজেটে।
এনটিভির চট্টগ্রাম স্টুডিও থেকে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামের রাস্তা চার থেকে ছয় লেন করা যায় কিনা। যানজট নিরসনে পদক্ষেপ না নিলে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাবে না।
একই স্থান থেকে অধ্যাপক সালেহ জহুর বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের যে সমস্যাগুলো আছে বিশেষ করে ট্রাফিক জ্যাম নিরসন ও কর্ণফুলির ড্র্রেজিং করতে হবে জরুরিভিত্তিতে। ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে বন্দরের। না হলে বিনিয়োগ বাস্তবায়ন হবে না।
পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য। চামড়া শিল্পের নাসের খান চামড়া শিল্পের রাসায়নিক পদার্থ আমদানির ওপর আরোপিত ভ্যাট উঠিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
সিমেন্ট শিল্পের শহিদুল্লাহ বলেন, সিমেন্টার ক্লিংকারের ওপর ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব করছি। কারণ আমরা এখন সিমেন্ট রপ্তানি করছি।
এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, নারী উদ্যোক্তারা যেন সহজে ঋণ পায় সে দিকে নজর দেওয়ার প্রস্তাব করেন।