খেলার খবর: যদি বলা হয়, বিশ্বকাপ তো শেষ হয়ে গেল! তেড়ে এসে পাঠককুল বলবেন, কী সব ভুলভাল লেখেন? এখনও তো পাঁচটা ম্যাচ বাকি! সুতরাং বলা ভালো, বাংলাদেশের জন্য শেষ হয়ে গেল রাশিয়া বিশ্বকাপ। কারণ, যে দুটি দল নিয়ে বাংলাদেশে ফুটবল উন্মাদনা হয়, সেই আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল বিদায় নিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে। ল্যাটিন ছন্দ ছাড়া বিশ্বকাপ এখন হয়ে গেছে ‘ইউরো কাপ’। এটি অবশ্য বলেছেন গ্যারি লিনেকার। গতকাল রাতেই নিশ্চিত হয়ে গেছে, বিশ্বকাপ শিরোপা এবারও যাচ্ছে ইউরোপে।
তাহলে বাংলাদেশি সমর্থকদের কী হবে? বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে থেকে গত প্রায় দেড়মাস ধরে যেসব উন্মাদনা চলে আসছিল, গতরাতেই তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। জার্মানির বিশাল পতাকা বানিয়েছিলেন এক কৃষক। সেই জার্মানিও বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে। পর্তুগাল, স্পেন, উরুগুয়ে সবাই ফিরে গেছে নিজ নিজ দেশে। বাকী ছিল শুধু ব্রাজিল। বেলজিয়ামের কাছে হেরে গতরাতে মাটি করে দিয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকদের আনন্দ!
এই দুই দলের মাঝে যেকোনো এক দলের খেলা থাকা মানেই দুই দলের সমর্থকদের ঈদ। যেমন ব্রাজিল হারলে আর্জেন্টাইনদের আনন্দ, আবার আর্জেন্টিনা হারলে ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য ঈদের দিন। তর্ক-বিতর্ক, কথার বাণে একে অপরকে ঘায়েল করা, বিশাল বিশাল সব পতাকা বানিয়ে উড়িয়ে দেওয়া, র্যালি করার মতো ঘটনা তো প্রতিদিনই ঘটেছে। সেইসঙ্গে ঘটেছে মারামারি, সশস্ত্র হামলার মতো অপরাধমূলক ঘটনাও। সবকিছুই এই দুই দলকে ঘিরেই।
শেষ ষোলো থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ওপার বাংলাতেও তাই। দুই দশক আগে আবাহনী-মোহামেডান নিয়ে এমন উন্মাদনায় মাতত বাঙালি জাতি। রাস্তায় মিছিল হতো, মারামারি হতো, গাড়ি ভাঙচুর এমনকী ভালো পারফর্ম করায় প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের ধরে মাইর দেওয়া হতো! দেশের ফুটবলের সেই সোনালী সময় এখন অতীত। বাঙালির মাঝে ফুটবল বাঁচিয়ে রেখেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।
রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে ল্যাটিন আমেরিকার দুই পাওয়ার হাউসের বিদায়ের পর এখন তো নিশ্চয়ই সমর্থকদের মধ্যে আর কোনো সংঘর্ষ হবে না। কথার লড়াইও থেমে যাবে। সবাই ভাই ভাই হয়ে কোনো চাপ না নিয়ে বিশ্বকাপের বাকী ম্যাচগুলো উপভোগ করবে। ফুটবলের এই উন্মাদনা বাঁচিয়ে রাখলে একদিন হয়তো আবারও জেগে উঠবে আমাদের দেশের ফুটবল। তবে, কোনো অবস্থাতেই সমর্থকদের মধ্যে মারামারি কাম্য নয়।