খেলার খবর: পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন ফখর জামান। সেঞ্চুরি করে বিশ্ব রেকর্ড গড়া উদ্বোধনী জুটিতে অবদান রাখলেন ইমাম-উল-হক। শেষটায় বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে দলকে রেকর্ড সংগ্রহ এনে দিলেন আসিফ আলি। জ্বলে উঠলেন বোলাররাও, জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে বড় জয় পেল পাকিস্তান।
চতুর্থ ওয়ানডেতে ২৪৪ রানে জিতেছে সফরাজ আহমেদের দল। রানের দিক থেকে পাকিস্তানের এর চেয়ে বড় জয় আছে কেবল একটি।
বুলাওয়ায়োতে শুক্রবার ১ উইকেটে ৩৯৯ রান করে পাকিস্তান। ওয়ানডেতে এটাই তাদের সর্বোচ্চ। ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে করা ৩৮৫ ছিল আগের সর্বোচ্চ।
কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব মাঠে বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে যায় ১৫৫ রানে।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে তেমন কোনো পরীক্ষায় পড়তে হয়নি পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে। ভালো জায়গায় টানা বোলিং করতে পারেননি স্বাগতিকদের কোনো বোলার।
যথারীতি এক প্রান্তে দ্রুত রান তুলেন ফখর, আরেক প্রান্তে সাবধানী ব্যাটিং করেন ইমাম। ওয়ানডেতে মাত্র সপ্তমবারের মতো সেঞ্চুরি তুলে নেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার। আগের তিন ম্যাচে দুটি শতরানের জুটি উপহার দেওয়া ফখর ও ইমাম এবার দারুণ ব্যাটিংয়ে অনেক রেকর্ড লেখালেন নতুন করে।
৪২ ওভারে দুই জনে তুলেন ৩০৪ রান। ওয়ানডেতে এটাই প্রথম তিনশ ছোঁয়া উদ্বোধনী জুটি। তাদের সৌজন্যে পাকিস্তান যে কোনো উইকেটে পেল প্রথম তিনশ রানের জুটি। ওয়ানডের ইতিহাসে সব মিলিয়ে এর চেয়ে বড় জুটি আছে কেবল তিনটি।
ওয়ানডেতে আগের সেরা উদ্বোধনী জুটি ছিল ২৮৬ রানের। ২০০৬ সালে লিডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই জুটি গড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া ও উপুল থারাঙ্গা।
ওয়ানডেতে পাকিস্তানের আগের সেরা জুটি ছিল ২৬৩ রানের। শারজায় ১৯৯৪ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে আমির সোহেলর সঙ্গে সেই জুটি গড়েছিলেন ইমামের চাচা ইনজামাম-উল-হক।
৬৯ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ইমাম। সিরিজে দ্বিতীয় ও আট ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ার তৃতীয় সেঞ্চুরি পেতে খেলেন ১১২ বল। শেষ পর্যন্ত ১২২ বলে ৮ চারে ফিরেন ১১৩ রান করে।
ইমামকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের শুরুর জুটি ভাঙেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। এই উইকেট ক্রিজে আনে আসিফকে। শেষটায় ঝড় তুলে তিনি দলকে নিয়ে যান চারশ রানের কাছে। অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেটে ৮ ওভারে ফখরের সঙ্গে গড়েন ৯৫ রানের জুটি।
ফখর পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৫১ বলে। সিরিজের দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ৯২ বলে। খুনে ব্যাটিংয়ে পরের সেঞ্চুরি তুলে নেন মাত্র ৫৬ বলে।
শেষ পর্যন্ত ১৫৬ বলে ২৪ চার আর ৫ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ২১০ রানে। ওয়ানডেতে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ। সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ।
আসিফ ২২ বলে ৫ চার আর ৩ ছক্কায় খেলেন ৫০ রানের টর্নেডো ইনিংস।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় ৬৭ রানের মধ্যে প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি।
ষষ্ঠ উইকেটে ৬৯ রানের জুটিতে খানিকটা প্রতিরোধ গড়েন এল্টন চিগুম্বুরা ও ডোনাল্ড তিরিপানো। এক ছক্কায় ৩৭ রান করা চিগুম্বুরাকে এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙেন ফাহিম আশরাফ।
সর্বোচ্চ ৪৪ রান করা তিরিপানোকে বোল্ড করে দেন লেগ স্পিনার শাদাব খান। এরপর বেশি দূর এগোয়নি জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ।
২৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার শাদাব। দুটি করে উইকেট নেন ফাহিম ও উসমান খান।
আগামী রোববার একই ভেন্যুতে হবে পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩৯৯/১ (ইমাম ১১৩, ফখর ২১০*, আসিফ ৫০*; মুজারাবানি ০/৭৭, এনগারাভা ০/৬৫, তিরিপানো ০/৮৫, চিশোরো ০/৫৬, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ১/৭৮, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ০/২৯)
জিম্বাবুয়ে: ৪৪.২ ওভারে ১৫৫ (হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ২২, কামুনহুকামউই ৩, মুসাকান্দা ১০, মারি ৫, মুর ২০, চিগুম্বুরা ৩৭, তিরিপানো ৪৪, ওয়েলিংটন ২, চিশোরো ১. মুজারাবানি ১*, এনগারাভা ১; জুনায়েদ ১/৩২, উসমান ২/২৩, ইয়াসির ০/৩১, ফাহিম ২/১৬, শাদাব ৪/২৮, শোয়েব ১/১৯)
ফল: পাকিস্তান ২৪৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফখর জামান