নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের তুজুলপুর হাইস্কুল মাঠে সার্কাসের অনুমোদন নিয়ে চলছে রমরমা জুয়ার আসর। অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই প্রতি রাতে এ জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে। এতে আয়োজক কমিটির সদস্য ছাড়াও একটি মহল লুটে নিচ্ছে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা। নিঃস্ব হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষ। এলাকায় বেড়েছে চুরি ও ছিনতাই।
তুজুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, তুজুলপুর কৃষি ক্লাবের আয়োজনে তুজুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গত ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ‘দি বাংলাদেশ গোল্ড সার্কাস’। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্কাস চালানোর জন্য ১২ দিনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। সার্কাস পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন নওয়্পাাড়ার শফিকুল ইসলাম। মাঠ ব্যবহারের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের আজীবন সদস্য ও স্থানীয় কৃষি ক্লাবের সভাপতি ইয়ারব হোসেন তাদের কাছে অনুমতি নিয়েছে। এজন্য সার্কাস শেষ হলে কিছু টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
তুজুলপুর গ্রামের আরাফাত হোসেন, ইমন ও আকাশ জানান, ১৭ জুলাই সার্কাস শুরু হলেও সন্ধ্যার পর থেকে প্যাণ্ডেলের মধ্যে ক্যাসিনো (চরকি) জুয়া শুরু হয়। রাত ১১ টা থেকে পরদিন ভোর চারটা পর্যন্ত চলে ওয়ান টেন। ভ্যান চালক, দিন মজুর, ব্যবসায়ি ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রতিদিন এ খেলায় অংশ নিচ্ছে। নামে সার্কাসের ম্যানেজার হলেও জুয়া খেলার পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন শফিকুল ইসলাম। জুয়ার জন্য শফিকুলকে সার্কাস আয়োজক কমিটিকে দিন প্রতি দিতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এ ছাড়াও প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। সব মিলিয়ে খরচ বাদ দিয়ে শফিকুল ইসলাম প্রতিদিন জুয়ার মাধ্যমে লুটে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
তারা আরো জানান, সার্কাস দেখতে প্রতিদিন এক’শ লোক না হলেও জুয়ার বোর্ডে আসে কয়েক’শ মানুষ। এরমধ্যে ভ্যান চালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ি, চাকুরীজীবি রয়েছেন। সার্কাসের নিরাপত্তা দেওয়ার নামে প্রশাসনের সদস্যদের কেউ কেউ জুয়ায় অংশ নিচ্ছেন। তাবে তারা হারলে টাকা ফেরৎ দেওয়া হচ্ছে। জুয়ার খরচ যোগাতে মাঠের পাশেই ওঁৎ পেতে রয়েছেন এক শ্রেণীর মানুষ, যারা কিনছেন মোটর সাইকেল, সাইকেল, ভ্যান, মোবাইল ফোন, ছাতাসহ বিভিন্ন সামগ্রী। কম দামে এসব জিনিস বিক্রি করে জুয়ার বোর্ডে নিঃস্ব হয়ে অনেকেই চুরি ও ছিনতাই করছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আলী হোসেনকে না জানিয়েই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ায় বিরোধ দেখা দিলেও পরে তা মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। সার্কাস শুরু থেকে হাউজিং খেলা চললেও তিন দিন পর সদর থানার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সার্কাস ও জুয়াসহ সমগ্র কর্ম পরিকল্পনা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন সার্কাস আয়োজক কমিটির সভাপতি ইয়ারব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রহমান, কোষাধ্যক্ষ সুদে ফারুক, ইয়ারব হোসেনের ভাগ্নে মনি, জাহাঙ্গীর, কবিরুলসহ কয়েকজন। প্রথম দিনে জুয়ার বিরোধিতা করায় আবুসাব নামের একজনকে পেটানোর পর ক্লাবে আটক রাখা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এহেন পরিস্থিতিতে সোমবার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।
তুজুলপুর মাধমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আলী হোসেন জানান, সার্কাস অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে তাকে প্রথমে জানানো না হলেও পরে তাকে অবহিত করা হয়েছে। তবে সেখানে যে জুয়া চলছে এটা তিনি জানেন না। তবে জুয়া চললে এলাকায় ক্ষতি হয়। সেকারণে আজই খোঁজ নিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সার্কাস আয়োজন কমিটির সভাপতি ইয়ারব হোসেন সার্কাসের আড়ালে জুয়া চলার কথা অস্বীকার না করেই বলেন, কৃষি ক্লাবটা ভাড়া নেওয়া। তাই নিজস্ব জায়গা কিনে ভবন করার প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে এটা তারা করছেন। তবে বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
সার্কাস প্যণ্ডেলের ম্যানেজার কাম জুয়ার ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম বলেন,সার্কাসের সঙ্গে একটু আধটু না চললে যাব কোথায় বলুন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ইফতেখার হোসেন জানান, তুজুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে সার্কাসের অনুমোদন দিলেও সেখানে কোন জুয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাৎক্ষণিক জুয়া খেলার খবর পেলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে।
সাতক্ষীরার তুজুলপুরে সার্কাসের আড়ালে চলছে রমরমা জুয়ার আসর
পূর্ববর্তী পোস্ট