নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অফিস সহকারি আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ডাক্তারি সনদ জালিয়াতি, প্রতারনাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা সচেতন নাগরিক মঞ্চের ব্যানারে এ কর্মসুচি পালিত হয়।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা নাগিরক মঞ্চের আহবায়ক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসুল, সদস্য সচিব আলী নুর খানর বাবুল, সাতক্ষীরা মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, স্বদেশ পরিচালক মধাব চন্দ্র দত্ত, প্রকৌশলী আবিদার রহমান, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ, শ্রমিক নেতা মোমিন হাওলাদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন,সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার এনায়েতপুর শানতলা গ্রামের শাহাবাজ হোসেনের মেয়ে বেবী নাজমিন ও তার বোন মারুফা প্রতিপক্ষের হামলায় জখম হয়ে গত ২৮ মে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। তারা ৩১ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। সার্জারী কনসালট্যান্ট ডাঃ শরিফুল ইসলাম তাদেরকে চিকিৎসা দেন। একই গ্রামের মাস্টাররোলে কর্মরত রুবেল ওরফে শামীমের মাধ্যমে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারি কাম ওয়ার্ড মাষ্টার আক্তার হোসেনের সঙ্গে বেবী, বোন মারুফা ও তাদের মা সাবিনা খাতুনের পরিচয় ঘটে। তবে ২৯ মে ডাঃ শরিফুল ইসলাম তাদের দু’ বোনকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বললে তারা আপত্তি জানায়। বেবীর মাথায় মাথায় ছয়টি সেলাই ও বোন মারুফার মাথায় গভীর ক্ষতের ফলে চারটি সেলাই দেওয়া অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই ডাঃ শরিফুল ইসলাম ২৯ মে তাদেরকে ছাড়পত্র দিতে চাওয়ায় বিষয়টি অঅক্তার হোসেনকে অবহিত করা হয়। ডাক্তারের দেওয়া এক্সরে স্লিপ নিয়ে ৩০ মে আক্তার হোসেন একজন নার্স বা আয়াকে ডেকে তাদেরকে নিয়ে ১২৫ নং কক্ষে এক্স-রে করে আসতে বলেন। আক্তার হোসেনের কথামত দু’ বোনের এক্স-রে বাবদ ৭০০ টাকা তাদের সঙ্গে পাঠানো নার্সকে দিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ৩০ মে সন্ধ্যায় ভূয়া এক্সরে প্লেট দিয়ে পরদিন ছাড়পত্র দেওয়ার পর এক্স-রে প্লেট, এক্স-রে স্লিপ নিয়ে ছাড়পত্রে কাটাকাটি করে ৩০ মে লিখে তাদেরকে ফেরৎ দেন। ওই দিন মাষ্টার রোলে কর্মরত শামীমের মাধ্যমে বেবী ও মারুফা জানতে পারে যে জামিন পাওয়ানোর সুবিধার্থে তড়িঘড়ি করে দুর্বল ডাক্তারি সনদ দেয়ার জন্য আসামী আব্দুর রহমানের কাছ থেকে৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন আক্তার হোসেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শাহাদাতুল আলম আবেদন করার আগেই তড়িঘড়ি করে আক্তার হোসেন ২৩ জুন এমসি পাঠিয়ে দেন। দু’ বোনের মাথায় গভীর ক্ষত হওয়ার কারণে কয়েকটি সেলাই দেওয়ার পরও এমসিতে ছেলা জখম বলে উল্লেখ করায় তারা অবাক হন। হাসপতালে তারা ডাঃ শরিফুল ইসলামের কাছে চিকিৎসা নিলেও তাকে বাদ দিয়ে এমসিতে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক হিসেবে ডাঃ পরিমল কুমার বিশ্বাস, ডাঃ মোঃ মাহাবুবর রহমান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফরহাদ জামিল সাক্ষর করেছেন। এমসিতে এক্স-রে করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। সাংসদ অ্যাড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহের কথা মত বিষয়টি নিয়ে নাগরিক মঞ্চের আহবায়ক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসুল একজন সাংবাদিককে নিয়ে গত ১৭ জুলাই সিভিল সার্জনের কাছে গেলে তিনি ৩০ মে ওই ওয়ার্ডে কর্মরত দু’ নার্সকে না ডেকে একজনকে ও সংশ্লিষ্ট ডাঃ শরিফুল ইসলামকে সামনে না রেখে চেষ্টা করেন সিভিল সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফরহাদ জামিলকে সামনে রেখে আক্তারের পক্ষ নিয়ে বেবী, মারুফা ও তার মা সাবিনা এক্সরে না করার স্বপক্ষে টিপসহি দিয়েছেন বলে দাবি করে প্রয়োজনে মামলা করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন । এটা দুর্ভাগ্যজনক।
বক্তারা আরো বলেন, আশাশুনি উপজেলার সুভদ্রকাটি গ্রামের অষ্টম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ২০১৬ সালের ২০ আগষ্ট শহরতলীর এল্লারচরে এনে সুভদ্রকাটি গ্রামের আওয়ামী লীগ সভঅপতি সোহরাব হোসেনসহ পাঁচজন গণধর্ষণ করে। তাকে পুলিশ উদ্ধার করে পরদিন সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। পরবর্তীতে সদর হাসপাতালে পাঠানো এমসিতে ধর্ষণের কোন আলামত মেলেনি ও তার শারিরিক অবস্থা স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করা হলেও মহাখালির ফরহেনসিক প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। সদর হাসপাতালের ডাক্তারি সনদ প্রতিবেদন পরিবর্তণ করতে প্রভাবশালী আসামী সোহরাব হোসেনের কাছ থেকে আক্তার হোসেন এক লাখ টাকা গ্রহণ করে বলে একাধিক দায়্তিশীল সূত্রে জানা যায়। এ ছাড়াও দুর্বল এমসি দেওয়ার জন্য ও এমসি গ্রিভিয়াস করার জন্য সদর হাসপাতালের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আক্তার হোসেন পরিচিতি লাভ করেছেন। এ ছাড়া গত বছরের নভেম্বর মাসে কালিগঞ্জের চণ্ডীতলা গ্রামের এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কলেজ ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আলামত পরিবর্তনের অভিযোগ রয়েছে আক্তারের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সাধারণ ডাক্তারি সনদ গ্রিভিয়াস হিসেবে লিখিয়ে নেওয়া, গ্রিভিয়াস সনদ সিমপিল ইন নেচার হিসেবে লিখিয়ে নেওয়া ব্যাপারে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আক্তারের বিরুদ্ধে। ফলে এক সময়কার জিরো আক্তার এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ডাাক্তারদের অনিয়মে বাধ্য করতে ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে আক্তার হোসেন মাষ্টার রোলে কর্মরত কয়েকজন অসহায় মেয়েকে ব্যবহার করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্যাথলজি বিভাগের রবিন, ওয়ার্ড মাষ্টার হয়েও স্টোর কিপার হিসেবে কামরুল ও স্বাস্থ্য সহকারি হিসেবে আক্তার হোসেন পুরো হাসপাতালটাকে জিম্মি করে ফলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছেন। ডাক্তারি সনদে অনিয়মের ক্ষেত্রে আক্তার হোসেনের নেওয়া আর্থিক সুবিধা সিভিল সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ভাগাভাগি করে নিয়ে থাকেন।
আর্থিক সুবিধা নিয়ে কোন রোগীর ডাক্তারি সনদ জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে সদর হাসপাতালের অফিস সহকারি আক্তার হোসেন বলেন, মাষ্টার রোলে কর্মরত কোন নারীকে তার ইচ্ছা মত ব্যবহার করার প্রশ্নই ওঠে না। তাকে অহেতুক জড়ানো হচ্ছে। কারণ কোন ডাক্তারি সনদে তার সাক্ষর থাকে না।
তবে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাক্তার তওহিদুর রহমান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফরহাদ জামিল হাসপাতাল সংক্রান্ত কোন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বেবী ও মারুফার অভিযোগের ভিত্তিতে আক্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা হাসপাতালের দুর্নীতবাজ কর্মচারী আক্তারের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন
পূর্ববর্তী পোস্ট