দেশের খবর: সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাস দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছাড়েনি। সহসা তারা ঘরে ফিরছে না, এটা ধরে নিয়ে সরকার কঠোর হতে যাচ্ছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি সরকারের অনুরোধ ছিল, তারা সব দাবি মেনে নিয়েছে, এখন শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরাতে হবে।
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর নিহতের প্রতিবাদে ঘাতক চালকের ফাঁসি নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং সহ ৯ দফা দাবিতে শুক্রবারও রাজপথে ছিল শিক্ষার্থীরা।রাজধানীর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। এখন আর শুধু রাজধানীর সড়ক নয়, শিক্ষার্থীরা সারাদেশে নিরাপদ সড়ক চাইছে।
শিক্ষার্থীদের টানা পাঁচদিনের আন্দোলনে গত বৃহস্পতিবার সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার বন্ধ ঘোষণা করলেও ছাত্রছাত্রীদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। সবাই রাস্তায় নেমে গেলে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। শুক্রবারও শিক্ষার্থীরা রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় নেমে বিক্ষোভ করেছে।আগের মতোই এদিন শিক্ষার্থীরা রাজপথে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। অভিনেতা অভিনেত্রীরা একাত্মতা প্রকাশের পর মানববন্ধন করেন।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহরেও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। আন্দোলনকারীরা শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেয়। তারা জানায়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। অভিভাবকরা পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনা দ্রুত বন্ধের দাবি জানান। এদিন পরিবহন শ্রমিকরাও রাস্তায় নামেন। তারা গণপরিবহন চলাচলে বাধা দেন। এছাড়া শনিবার সকাল থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির (পরীক্ষা-ক্লাস বর্জন) পাশাপাশি সড়ক অবরোধেরও ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। গণস্বাক্ষর সংগ্রহের কর্মসূচি ঘোষণার কথা ভাবছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আন্দোলন দমনে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কোন দিকে যাচ্ছে তার প্রতিও নজর রাখছে তারা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ না করতে এখন পর্যন্ত সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলে হালকা বল প্রয়োগের পাশাপাশি বিকল্প পদক্ষেপের বিষয়টিও সরকার চিন্তায় রেখেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পুঁজি করে বিরোধীপক্ষ বা যে কোনো ধরনের স্বার্থান্বেষীমহল অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভেতর সরকারবিরোধী বহিরাগতরা ঢুকে স্যাবোটাজ করতে পারে বলে সরকারের কাছে গোপন রিপোর্ট রয়েছে। যে কারণে চলমান আন্দোলনের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে সরকার। পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদেরও আন্দোলন-পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীর রাস্তায় অবস্থান নিয়ে লাইসেন্সবিহীন পুলিশের গাড়ি, মন্ত্রীর গাড়ী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আরো কয়েকজনের গাড়ি আটক করে। মন্ত্রীকে পর্যন্ত গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যেতে হয়েছে। লাইসেন্স না থাকায় সাধারণ মানুষের গাড়িও আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে পড়ে রাস্তায় গাড়ি নামায়নি পরিবহন সংস্থাগুলো। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীর মানুষ। তারপরও রাজধানীর মানুষের এই আন্দোলনে সমর্থনের অভাব হয়নি। অনেক পায়ে হেঁটে বা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশায় চলাচল করলেও আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন।
সাধারণ লোকদের কাছে এই আন্দোলন জনপ্রিয় হলেও সরকারের জন্য সৃষ্টি করেছে বিব্রতকর পরিস্থিতি। ফলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এ সময় আন্দোলন দমন করতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্তে পুলিশের কর্মকর্তারা মতামত দেন।
ওই বৈঠক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে কঠোর হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। শেষ বারের মতো সবাইকে সতর্ক করা হলো। এরপরও যদি আন্দোলনকারীরা সতর্ক না হয়, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী রবি ও সোমবার পর্যন্ত সরকার আন্দোলন-পরিস্থিতি নজরে রাখবে। এরপরই পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোর হওয়ার চিন্তা মাথায় রয়েছে। সেক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের রাজপথ থেকে হটাতে মৃদু কঠোরতা দেখাতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, বড়রা যা পারেনি ছোটরা তা করতে পেরেছে। তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে যেসব দাবি তুলেছে তা মানতে ইতোমধ্যে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এবার শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে পড়ালেখায় মনোযোগী হোক, এটাই এখন সরকারের চাওয়া। এজন্য সরকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পরিচালনা পর্ষদকেও অনুরোধ করছে শিক্ষার্থীদের ঘরে এবং ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে। তারপরও শিক্ষার্থীরা না ফিরলে বিকল্প পদক্ষেপগুলো নিয়ে ভাবছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভেতর বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের সব জেলার পুলিশ সুপার ও মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করতেও বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরাতে চতুর্মূখি পদক্ষেপ
পূর্ববর্তী পোস্ট