নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কে এম মোশাররফ হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি গণপিটুনিতে নিহত আবদুল জলিল গাইনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রোববার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে কৃষ্ণনগর ইউপি সদস্য জলিলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
এদিকে ময়নাতদন্ত হওয়ার পর জলিলের মরদেহ নিতে রাজি হয়নি তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য। অপরদিকে গ্রামবাসী তাঁর লাশ গ্রামে ঢুকতেও দেয়নি। তারা জলিলকে গ্রামে দাফন করতে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত রাত ৮টার দিকে জলিলের লাশ নেওয়া হয় কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি কবরস্থানে। সেখানে তাঁর দাফনের কাজ শুরু হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে গণপিটুনিতে নিহত জলিল গাইনের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে রোববার। দিনভর পরিবারের কেউ তাঁর লাশ গ্রহণ করতে আসেনি। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁর লাশ পুলিশ পাহারায় গ্রামের বাড়ি কৃষ্ণনগরের শংকরপুরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী তাতে বাধা দেয়। জলিলকে গ্রামে দাফন করতে দেওয়া হবে না বলে তারা জানিয়ে দেয়। এমনকি তাঁর জানাজাও করতে দেয়নি। এ অবস্থায় জলিলকে কালীগঞ্জ উপজেলা সদরে সরকারি কবরস্থানে দাফন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জলিলকে নিয়ে কৃষ্ণনগরে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ লোক তাঁকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। স্থানীয়ভাবে তাঁর নাম ছিল ডাকাত জলিল ওরফে খুনি জলিল।
ওসি হাসান হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিনবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবদুল জলিল গাইনকে গতকাল শুক্রবার রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে সাতক্ষীরায় আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জলিলকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য কৃষ্ণনগরে যাওয়া মাত্র হাজার হাজার লোক এসে জোর করে তাঁকে ছিনিয়ে নেয়। ক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে।
ওসি জানান, চেয়ারম্যান মোশাররফকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল সেখানেই তাঁর হত্যা মামলার প্রধান আসামি জলিলকে পিটুনি দিয়ে হত্যা করে লোকজন। গণপিটুনি থেকে রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
জলিলের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাসহ ডাকাতি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ঘের দখল এবং ধর্ষণের অভিযোগে ১২টি মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি হাফিজুর।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে কৃষ্ণনগর বাজারে যুবলীগ কার্যালয়ে বসে থাকাকালে চেয়ারম্যান কে এম মোশাররফ হোসেনকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় একই ইউপির সদস্য আবদুল জলিল গাইন ওরফে ডাকাত জলিল ওরফে খুনে জলিলকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন নিহতের মেয়ে সাথিয়া পারভিন।