দেশের খবর: আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে উন্নয়ন প্রকল্প পাশের হিড়িক পড়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দিয়েছে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্প। দু’দিন পরই আজ বৃহস্পতিবার একনেক উঠছে আরও ২০টি উন্নয়ন প্রকল্প।
এর মধ্যে ভৌত অবকাঠামো বিভা এবং কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রকল্পই বেশি। সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়নের প্রকল্প রয়েছে ৬টি, যেগুলো ভোটার তুষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া আরও ৩০-৪০টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত ৫ বছরে দু’দিনের ব্যবধানে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
পরিকল্পনামন্ত্রী বুধবার বলেন, নির্বাচনের সময় সাধারণত বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেন না। এ সময় সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। তাছাড়া আমরা উন্নয়নের মাধ্যমে এমন পথ তৈরি করতে চাই, যাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ওই পথেই হাঁটতে পারেন। পরিবেশ তৈরি ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উন্নয়নের গতি থামানো যাবে না। নির্বাচন চলবে, আবার উন্নয়নও হবে। কোনোটির জন্য কোনোটি স্থগিত করা ঠিক নয়। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতেই ঘন ঘন একনেক বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনের দিন ছুটিও ঘোষণা করা হয় না। সবাই ভোট দিয়ে অফিসে চলে যান। সেখানে তো কোনো সমস্যা হয় না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই প্রকল্প অনুমোদন এবং সংশোধন করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মন্ত্রণালয়গুলো।
ফলে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের চাপে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের। বিশেষ করে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ এবং এলজিইডির প্রকল্প দেখভালকারী কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর চাপ বেশি।
গত চারটি একনেক বৈঠক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব বৈঠকে নতুন ও সংশোধিত মিলে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৬৭টি উন্নয়ন প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৭৫ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, একনেকে আজ যেসব প্রকল্প উপস্থাপন হচ্ছে তার মধ্যে ১৭টি রয়েছে তালিকায়, বাকি তিনটি সরাসরি টেবিলে যাবে।
তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিবাস নির্মাণ, রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস/ট্রাক টার্মিনাল তৈরি, ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, বৈরাগীরপুল (বরিশাল) টুমচর-বাউফল (পটুয়াখালী) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের নিমিত্তে নন্দিগ্রাম-তালোড়া-দুঁপচাচিয়া-জিয়ানগর-আক্কেলপুর জেলা মহাসড়ক এবং নন্দিগ্রাম-কালীগঞ্জ-রানীনগর জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চত্বরে একটি বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন- চট্টগ্রাম জোন (দ্বিতীয় পর্যায়), মোল্লাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সোলার পিভি পাওয়ার প্লান্ট তৈরি, যশোর অঞ্চলের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, খুলনা-বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ, সংস্কার ও আধুনিকায়ন প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত), পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন, বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ উন্নয়ন প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়), রংপুর জেলার মিঠাপুকুর-পীরগাছা-পীরগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলায় যমুনেশ্বরী, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণ ও নদী পুনঃখনন, উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন এবং দ্য প্রজেক্ট ফর দ্য ইমপ্রুভমেন্ট অব রেসকিউ ক্যাপাসিটিস ইন দ্য কোস্টাল অ্যান্ড ইনল্যান্ড ওয়াটারস।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া ২০ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩২ হাজার ৫২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর আগে গত ২ অক্টোবর ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক, যেগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৩ হাজার ২১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং ৬১ জেলায় ব্রিজ নির্মাণ সংক্রান্ত একটি বড় প্রকল্পসহ মোট ১৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১২ হাজার ৫৪৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
গত ১১ সেপ্টেম্বর এমপিদের সুপারিশে মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়নসহ ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক, যেগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, ভৌত অবকাঠামো এবং কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রকল্পগুলোতে রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ বেশি।
এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে প্রকল্প অনুমোদনের কথা বলে তাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পারেন। তাই এই দুই বিভাগেই চাপ বেশি। তবে ঠিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা না হলে সঠিক মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এতে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার না হয়ে বরং অপচয় হতে পারে।