বিনোদনের খবর: ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর। দেশজুড়ে মুক্তি পেল ‘চাঁদনী রাতে’ নামের একটি চলচ্চিত্র। নায়ক সাব্বির। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশামের এই ছবিটি তেমন করে আলোচনায় আসেনি। তবে আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন কিশোরী নায়িকা। যার হাসি, সাবলীল অভিনয় আর কৈশোরের দুরন্তপনা দাগ কেটেছিলো দর্শকের মনে।
সেই দাগ চিরস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পেল পরের বছরই। তৎকালীন জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহের বিপরীতে জুটি বাঁধলেন সেই কিশোরী। মুক্তি পেলে ‘তুমি আমার’ নামের ছবিটি। আর সেই ছবি রাতারাতি অখ্যাত এক নুপূরকে বাংলার নায়িকা শাবনূরে পরিণত করে দিলো। বাকীটুকু ইতিহাস। সময়ের পালা বদলে তিনি কেবল নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন দেশের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকাদের অন্যতম।
আজ ১৫ অক্টোবর। সিনেমায় অভিনয়ের ২৫ বছর অর্থাৎ রজত জয়ন্তীতে পা দিয়েছেন শাবনূর। । তিনি আজকে তার ভক্ত-অনুরাগীদের কাছ থেকে নানা শুভেচ্ছায় ভাসছেন।
ক্যারিয়ারে ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে শাবনূর বলেন, ‘মনে হয় এইতো সেদিন এলাম। অথচ কতোটা পথ ফেলে এসেছি পেছনে। দেখতে দেখতে ২৫ বছর কেটে গেল। কত কিছু মাইনাস হয়েছে, কতকিছু যোগ হয়েছে। পুরনো দিনগুলো, এহতেশাম দাদুর কথা ভাবলে চোখের পাতা ভিজে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রে এখনো যথেষ্ট সম্মান নিয়েই আছি আমি। আমার অভিনয় জীবনের পথচলায় আমার প্রত্যেক চলচ্চিত্রের নায়ক, পরিচালক, প্রযোজক, সিনেমাটোগ্রাফার, কাহিনিকার, প্রোডাকশনবয়, ট্রলিম্যান থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে আমার বোন ঝুমুরের কথা উল্লেখ করতেই হয়। সে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। চলচ্চিত্র পরিবারও আমার সঙ্গে ছিল সব সময়। তাই চলচ্চিত্রের সবাইকে নিয়েই আমি ভালো থাকতে চাই। সবার কাছে দোয়া চাই যতদিন থাকি যেন ভালো থাকতে পারি। আমার একমাত্র ছেলে আইজানের জন্যও দোয়া করবেন।’
শাবনূরের পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহিদ নুপুর। গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম তার নাম বদলে রাখেন শাবনূর।
শাবনূর, দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছেন ঢালিউডে। সালমান শাহের নায়িকা হিসেবে শাবনূর পেয়ে গিয়েছিলেন অন্যরকম জনপ্রিয়তা। ঢাকাই ছবিতে সালমান-শাবনূর একটি আবেগের নাম, ভালোবাসার নাম। ১৪টি ছবিতে জুটি হয়েছিলেন তারা। যার বেশিরভাগই ছিলো সুপারহিট। তবে এ জুটির ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ছবিটিকে ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে ব্যবসা সফল সেরা পাঁচটি ছবির একটি হিসেবে মনে করা হয়।
শাবনূর ক্যারিয়ারজুড়ে সালমান ছাড়াও জুটি বেঁধে সফল হয়েছেন রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান, বাপ্পারাজ, আমিন খান, মান্না ও শাকিব খানের সঙ্গে। তবে রিয়াজের সঙ্গে শাবনূরের জুটির আবেদন ছিলো সবার চেয়ে এগিয়ে। সালমান পরবর্তী সময়ে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি উপহার পেয়েছিলো রিয়াজ-শাবনূর জুটি। অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবিতে তারা কাজ করেছেন। তারমধ্যে ‘মন মানে না’, ‘নারীর মন’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘এ বাঁধন যাবে না ছিড়ে’, ‘বুক ভরা ভালোবাসা’, ‘কাজের মেয়ে’, ‘মাটির ফুল’, ‘সুন্দরী বধু’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ উল্লেখযোগ্য।
শাবনূর প্রযোজকদের কাছে ছিলেন ভরসার নাম। তাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে সিনেমা। অনেক নতুন নায়কদের সঙ্গে কাজের ঝুঁকি তিনি নিতে পারতেন। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছেন শাকিব খানের নায়িকা হয়ে। চলচ্চিত্রপাড়ায় এ গল্প প্রতিষ্ঠিত, দ্বিতীয় নায়ক হিসেবে অভিনয় করা শাকিব খানের রাজকীয় উত্থানের পেছনে শাবনূরের অনেক অবদানই রয়েছে।
‘দুই নয়নের আলো’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাবনূর। তবে নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম প্রিয় ছবি হিসেবে শাবনূর উল্লেখ করেন ‘নিরন্তর’-কে। ২০০৬ সালে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘জনম জনম’ অবলম্বনে এই ছবিটি পরিচালনা করেন আবু সাইয়ীদ।
২০১৩ সালে শাবনূর অভিনীত সর্বশেষ ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ ছবিটি মুক্তি পায়। ওই ছবিতে তার সহশিল্পী ছিলেন ফেরদৌস ও মৌসুমী। পরিচালনা করেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক।
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকাবস্থায় ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে আংটি বদল হয় শাবনূরের। ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তারা। এরপর মিডিয়াকে আড়াল করে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন শাবনূর। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ছেলে সন্তানের মা হন তিনি। তার ছেলের নাম আইজান নিহান।
অনেকদিন ধরেই চলচ্চিত্রে নেই শাবনূর। তবুও তার জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। এখনো শাবনূরকে এক নজর দেখতে ঢল নামে মানুষের। তিনি এখনো যুবকের মনে সুন্দরীতমা। এখনো শাবনূরকে সিনেমায় খুঁজে বেড়ান সিনেমার দর্শক।