দেশের খবর: সরকারি চাকরিতে বর্তমানে চার লাখের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। প্রায় ১৮ লাখ পদের মধ্যে ১৪ লাখের কাছাকাছি কর্মরত, বাকি পদে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।
চাকরিপ্রার্থীদের অনেকে জানিয়েছেন, শিক্ষিত বেকারদের দ্রুত চাকরি নিশ্চিত করতে হলে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর ও সময় বেঁধে দিতে হবে। আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতা, প্রভাবশালী তদবিরের ব্যাপক প্রভাব এবং অনেকক্ষেত্রে নিয়োগ বাণিজ্য প্রকট আকার ধারণ করায় নিয়োগ বিলম্বিত হয়। ফলে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকাররা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পাশাপাশি তারা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা একটি যৌক্তিক পর্যায়ে দ্রুত উন্নীত করার দাবিতে অনড় আছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, একটি পদের বিপরীতে অসংখ্য আবেদন থাকে। মূলত এসব কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া একটু বিলম্বিত হয়। তবে শূন্যপদের বিষয়টি দ্রুত কীভাবে সহজীকরণ ও নিষ্পত্তি করা যায়, সেজন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন। যেখানে সব সচিবের সঙ্গে একটি বৈঠক করে এর সহজীকরণ উপায় বের করা হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে- আমরা অসংখ্য পদ সৃষ্টি করছি বলেই এত শূন্যপদের কথা বলা হচ্ছে। এ সরকারের আমলে ১০ বছরে লাখ লাখ পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটিও বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া সরকারের রাজস্ব খাতের বাইরে রয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পে বড় চাকরির বাজার। সেখানে বিপুল সংখ্যক লোক চাকরির সুযোগ পেয়েছে এবং এখনও পাচ্ছে। কেননা বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যা ও বৃহৎ সাইজের প্রকল্প এর আগে কোনো সরকার গ্রহণ করেনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিদ্যুৎ, আইসিটি ও রেলওয়ে খাত। পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দর, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, হাই-টেক পার্কের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এছাড়া রাজস্ব খাতে শুধু পুলিশেই ৫০ হাজারের বেশি পদ সৃষ্টি ও চাকরি দেয়া হয়েছে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে আমাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জোরালো মনিটরিং করাসহ জবাবদিহিতার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। কেননা শূন্যপদের বিষয়ে প্রতিমাসে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে রুটিনমাফিক তথ্য দেয়া হয়। তিনি মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার কারণেও শূন্যপদ পূরণে সময়ক্ষেপণ হয়। এতে শূন্যপদ বেড়ে যায়।
সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে অনুমোদিত মোট পদ ১৭ লাখ ৬২ হাজার ১৯৫টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ১৩ লাখ ৬২ হাজার ২৯৮ জন। অবশিষ্ট ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৯৭টি পদ খালি আছে। এ হিসাবটি আমলে নিলে শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীতে ৪৮ হাজার ৭৯৩টি, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৬৫ হাজার ৮৩টি, তৃতীয় শ্রেণীতে ২ লাখ ৬ হাজার ৭৬০টি এবং চতুর্থ শ্রেণীতে ৭৯ হাজার ২৬১টি খালি আছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এর আগে ২০১৩ সালে অনুমোদিত মোট পদ ছিল ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৬টি। এর মধ্যে কর্মরত ছিলেন ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৯ জন। অবশিষ্ট ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭টি পদ খালি ছিল।
উল্লিখিত তথ্য বিশ্লেষণে গত ৫ বছরের ব্যবধানে অনুমেদিত পদের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ১৫৯টি। তুলনামূলক হারে শূন্যপদ বেড়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩১০টি। তবে ডিসেম্বর নাগাদ তথ্য হালনাগাদ করলে অনুমোদিত ও শূন্যপদের সংখ্যা আরও বাড়বে।
এদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ লাখ ৪৭ হাজার এবং মহিলা ১৩ লাখ ৩০ হাজার। দক্ষ ও অদক্ষ মিলিয়ে যাদের বয়স ১৫ বছরের ওপরে।
সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে সক্রিয় থাকা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি মো. ইমতিয়াজ হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, সরকারি চাকরিতে শূন্যপদ কমাতে হলে অবশ্যই চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধিসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ার জটিলতা দ্রুত কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে শুধু পদ সৃষ্টি করে লাভ হবে না। যথাসময়ে নিয়োগ দেয়াটা জরুরি।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে কর্মসূচির মধ্যে আছি। আমাদের পক্ষে সংসদীয় কমিটি ৩ দফা সুপারিশ করলেও সরকার সেভাবে আমলে নেয়নি। তবে ৩০ থেকে ৩২ বছর একটি প্রক্রিয়া চলমান আছে। যদিও আমরা ৩৫ করার দাবিতে অনড় আছি।’
ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, উচ্চশিক্ষায় এখনও গড়ে সেশনজট আড়াই বছর। যদিও সরকারিভাবে দাবি করা হয় ৫ শতাংশ। কিন্তু সেটি সত্য নয়। এছাড়া সরকারি চাকরির যোগ্যতা হিসেবে ২১ বছর নির্ধারণ করা আছে, যা এ যুক্তিতে একেবারে অকার্যকর। কেননা এ বয়সে দেশে কেউ অনার্স শেষ করতে পারেন না। তাই এসব যুক্তি বিবেচনায় নিলে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অবশ্যই দাবি অনুযায়ী বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে অবসরের সীমাও বাড়তে পারে।