দেশের খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে ও পরে মোট ১০ দিন মাঠে থাকবেন সশস্ত্র (সেনা, নৌ ও বিমান) বাহিনীর সদস্যরা। ভোট গ্রহণের সাত দিন আগে ২৩ ডিসেম্বর থেকে তাদের মাঠে নামার কথা রয়েছে।
থাকবেন ভোটের পরের দুই দিন। বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা দিতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কাজ করবেন। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জানিয়েছিলেন, ১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট দল মাঠে নেমে রেকি করবে।
এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ১১ দিন, পুলিশ ও র্যাব ৭ দিন, কোস্টগার্ড ৭ দিন ও আনসার সদস্যরা ৬ দিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে। প্রথমবারের মতো ভোট কেন্দ্রের পাহারায় নির্বাচনে নামানো হচ্ছে গ্রাম পুলিশ (দফাদার ও চৌকিদার) তারা মাঠে থাকবেন দুই দিনের জন্য।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুকূলে অর্থ বরাদ্দবিষয়ক এক সভায় এমন তথ্য দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আর ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে ভোটের আগে ও পরে ১০ দিনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নির্দিষ্টসংখ্যক সদস্য মাঠে রাখার বিষয়ে কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তাদের নামার আগে এ বাহিনীর কিছুসংখ্যক সদস্য মাঠ পর্যায়ে রেকি করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
জানা যায়, অর্থ বরাদ্দবিষয়ক সভায় পুলিশ নির্বাচন উপলক্ষে চেয়েছে ৪২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতেই খরচ হবে ৭৬ কোটি টাকা। এই চাহিদার যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এক চিঠিতে বলেছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচন অতীতের তুলনায় অনেক বেশি ঘটনাবহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বিবেচনায় ভোটের আগে ও পরে সাত দিন মাঠে থাকতে চায় পুলিশ। অপরদিকে আনসার বাহিনী চেয়েছে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা। বিজিবি চেয়েছে ৭৩ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। যদিও এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দ ধরা রয়েছে ৪১২ কোটি টাকা। মোট নির্বাচনী বরাদ্দ ৭০২ কোটি টাকা।
আমরা তাদের বলেছি, যৌক্তিকতা বিবেচনায় আমরা সাত দিনের মধ্যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য ব্যয়ের চাহিদা দিতে। সেগুলো পাওয়ার পর বিবেচনা করা হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, আগামী ১৩ ডিসেম্বর সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সব রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ওই বৈঠকের পরই আইনশৃঙ্খলা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের কত বাজেট সেটা জানতে চেয়েছি।
আমরা এবার আনসার বাহিনীকে শতভাগ অগ্রিম বরাদ্দ দেব। আর অন্যান্য বাহিনীকে বাজেটের ৫০ শতাংশ অগ্রিম বরাদ্দ দেব। বাকি টাকা পরে সমন্বয় করা হবে। ইসি সচিব বলেন, এবার গ্রাম পুলিশকেও নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করা হবে।
সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ভোটের আগে ও পরে ১০ দিনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে মাঠে নামানোর বিষয়ে ইসির পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তা চূড়ান্ত করা হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পর।
আরও জানা গেছে, এবারও ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনেও তাদের একইভাবে মোতায়েন করেছিল ইসি। যদিও ২০০৮ সালে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। ওই সময়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)-তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পরে তা বাতিল করা হয়। সূত্র মতে, এবার নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য কমবেশি ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা রয়েছে। তবে মঙ্গলবারের বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ চাওয়া হয়নি। ইসির কর্মকর্তারা জানান, সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে যে বরাদ্দ চাওয়া হয়, সাধারণত তাই দেয়া হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।
জানা যায়, এবার সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভোটের সাত দিন আগে অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর মাঠে নামবেন। ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর ও পরে আরও দুই দিন তারা মাঠে থাকবেন। আর আনসার সদস্যরা ছয় দিন মাঠে থাকার প্রস্তাব করেছেন। যদিও আগের নির্বাচনে তারা পাঁচ দিন মাঠে ছিলেন। এবারের বাজেটে আনসার সদস্যদের জন্য প্রায় দু’শ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ বরাদ্দের চেয়ে ২৪৩ কোটি টাকা বেশি চেয়েছে এ বাহিনীর কর্তৃপক্ষ। এর আগে পুলিশ চার দিন থাকলেও এবার সাত দিন থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যরা নির্বাচনের সময় থাকবেন চার দিন, মোতায়েনের আগে দুই দিন ও প্রত্যাগমনের জন্য একদিন এই মোট সাত দিন ধরে ৪২৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে; যদিও এ বাহিনীর জন্য বরাদ্দ দেড়শ’ কোটি টাকার কিছু বেশি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচনে পুলিশের ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এর মধ্যে এসপি থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা ৩৪৯ জন। নির্বাচনে কোস্টগার্ডের সদস্যরা কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। তারাও মাঠে সাত দিন অবস্থান করতে চান। তবে এ বাহিনীর কতজন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন তা জানা যায়নি।
প্রথমবারের মতো কেন্দ্রে গ্রামপুলিশ: ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রথমবারের মতো নির্বাচনে গ্রামপুলিশ (দফাদার ও চৌকিদার) সদস্যদের নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ৪৫ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ১০ জন করে মোট ৪৫ লাখ গ্রামপুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাদের ভোট গ্রহণের আগের দিন ও ভোটের দিন কেন্দ্রের পাহারায় রাখা হবে। দুই দিনে জনপ্রতি এক হাজার টাকা ভাতা দেয়া হবে। আরও জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে দু’জন পুলিশ সদস্য, ১২ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে।