রাজনীতির খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চার দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল চেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার বিরুদ্ধে দলীয় পক্ষপাতের অভিযোগ এনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দলটি।
বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম এ কথা বলেন।
চারটি সংস্থার নিবন্ধন বাতিল চেয়ে তিনি বলেন, দেশের ১১৮টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষণ সংস্থার মধ্যে ৪টির বিষয়ে আমাদের কাছে মারাত্মক তথ্য রয়েছে। এদের কর্মকাণ্ড আমরা দীর্ঘদিন থেকেই দেখে আসছি। এরা একেবারেই দলীয়।
ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউণ্ডেশন, লাইট হাউজ ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ- এ চারটি সংস্থার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের অতীত মোটেও ভালো নয়। এ জন্য আমরা খুবই উদ্বিগ্ন যে এরা যদি পর্যবেক্ষণে থাকে বা তাদের কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়- তাহলে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণ তারাই করতে পারবেন, যারা নিরপেক্ষ। কোনো রকম রাজনৈতিক দল ও আদর্শের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। আদর্শের সঙ্গে মিল থাকতে পারে কিন্তু ওই রকম সরাসরি দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে করতে পারবে না। তবে জানিপপ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি নেই বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত হামলা করছে। এসব হামলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে ইসিকে সতর্ক করেছেন বলেন মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সহিংসতা ঘটে। এর পরদিনই বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিনিধিদল।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এইচ টি ইমাম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ প্রমুখ।
ইসির সঙ্গে মিটিং শেষে এইচ টি ইমাম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা সহিংসতা ও হামলার খবর পাচ্ছি। আর যেসব হামলা হচ্ছে তার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের ওপর হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুজন কর্মী হত্যা করা হয়েছে। বেছে বেছে আক্রমণ করা হচ্ছে এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়টি আমরা কমিশনকে অবহিত করেছি।
তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলার কথা বলা হয়েছে। আমারা এ বিষয়ে তথ্য নিয়েছি। তিনি সেখানে গেছেন পুলিশকে কোনো খবরও দেননি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির পুরনো পল্টন ও গুলশান অফিসে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে তুমুল তোলপাড় হয়েছে। এটি মির্জা ফখরুল ইসলামের এলাকায়ও হয়েছে। এখানে তার দলের লোকেরাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। অথচ বিশেষ একটি পত্রিকা এটাকে হেডলাইন করেছে। আমি ওই পত্রিকার সম্পাদককে ফোন করেছিলাম। তিনি বলেছেন ভুল হয়ে গেছে। ভুল এ রকম হওয়া উচিত নয়। এত বড় খবর যাচাই-বাছাই করে দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, মিডিয়ার প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে এ ধরনের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে এবং সুন্দরভাবে পরিবেশন করবেন যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে। নির্বাচনের আগে নানারকম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা সবাই তৎপর।
এইচ টি ইমাম বলেন, কমিশনকে বলেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদের কর্তৃত্বাধীন। আপনারা তাদের ব্যবহার করুন; যাতে করে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে ব্যর্থ বলব না, তবে তাদের এখনই সতর্ক হতে হবে। তাদেরকে বলেছি- এসব বিষয়ে এখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিন। ঘটনার জন্য যারা চিহ্নিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। কমিশন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হতে নির্দেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
সহিংসতা বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা যথেষ্ঠ নিরপেক্ষ ও নির্মোহ। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তারা এটাও বলেছেন বৃহত্তর দল হিসেবে আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। আমরা বলেছি আমরা আমাদের দায়িত্বপালন করেছি। কিন্তু আমরা যদি আক্রান্ত হই- তাহলে সেটা তো আপনাদের রক্ষা করতে হবে।