অনলাইন ডেস্ক: সরকারি চাকরির আকর্ষণীয় ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে গত দশ বছরে রেকর্ড সংখ্যক মেধাবী নিয়োগ পেয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই দশ বছরে ৫৪ হাজার ৬৩৬ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাডার ২৬ হাজার ৫৯২ জন এবং নন-ক্যাডার ২৮ হাজার ৪৫ জন। পক্ষান্তরে ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অস্বচ্ছ নিয়োগ, প্রশ্নফাঁস আর দলীয়করণের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পিএসসি।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্বচ্ছতার কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পিএসসির প্রতি পূর্বের তুলনায় বহুলাংশ আস্থা বেড়েছে। ধীরে ধীরে অনিয়মের ক্ষত কাটিয়ে গত দশ বছরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থার প্রতিষ্ঠানে রূপ পেয়েছে। বিশেষ করে গত তিন বছরে পিএসসির ইতিবাচক পরিবর্তন বিস্ময়কর। এই সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেধাবী নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, স্বচ্ছতার মূল কারণ হলো কাজের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। পিএসসির কার্যক্রমে কখনই সরকার হস্তক্ষেপ্ত করেনি। বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সব সময় সহযোগিতা পেয়েছি। পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করেছি। অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। কমিশনের সংশ্লিষ্টদের বিরামহীন পরিশ্রম ও সততার কারণে সাধারণ পরীক্ষার্থীরা যোগ্যতার মূল্য পাচ্ছে।
নিয়োগের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার মিলিয়ে কমিশনের সুপারিশ ছিল ১৬ হাজার ৯৮৭ প্রার্থী। এর মধ্যে ক্যাডার ১২ হাজার ৭৯৪ জন এবং নন-ক্যাডার ৪ হাজার ১৯৪ জন। তবে বেশির ভাগ নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ছিল। সেই তুলনায় স্বচ্ছতার সাথে গত দশ বছরে তিনগুণের বেশি নিয়োগ দিয়েছে পিএসসি।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের নন-ক্যাডার বিধিমালা জারি করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার পদে সুপারিশ পাননি এ রকম প্রার্থীদের নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভিন্ন গ্রেডে সুপারিশ করায় ক্যাডারের চেয়ে বেশি প্রার্থী নন-ক্যাডারে চাকরি পাচ্ছেন। এতে শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে বিসিএস পরীক্ষার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে।
পিএসসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংস্থার নতুন ভাবমূর্তির কারণেই মেধাবীরা এখন অনেক বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে বিসিএস ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষায়। এ ছাড়া পিএসসিকে আরও বেশি জনবান্ধব করে তুলতে নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোগ। এখন অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ফলে প্রার্থীরা ঘরে বসে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারছেন। এসএমএসে প্রার্থীদের পরীক্ষার সময়, তারিখ এবং স্থান সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। তা ছাড়া কমিশনের ওয়েবসাইটে পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল বিষয়ে তথ্য উপাত্ত ও ফলাফল নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষা ও অন্যান্য নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন ব্যাংক করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ৩৮তম বিসিএস থেকে দুজন পরীক্ষকের মাধ্যমে উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি কার্যকর হয়েছে। প্রশ্নপত্র বাংলা ভার্সনের পাশাপাশি ইংরেজি ভার্সনে করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী প্রার্থী এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের পরীক্ষার সুযোগও তৈরি করা হয়েছে। বিসিএস ক্যাডার পদের ফলাফল প্রস্তুতের জন্য ক্যাডার ডিস্ট্রিবিউশন সফটওয়্যার (ক্যাডস) এবং নন-ক্যাডার পদের ফলাফল প্রস্তুতের জন্য উদ্ভাবিত সার্চ ইঞ্জিন সফটওয়্যারের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে।
পিএসসি চেয়ারম্যান ড. সাদিক জানান, কমিশন যাতে আরও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে অবকাঠামোগত সমপ্রসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, বিভাগীয় কার্যালয়গুলো আরও কার্যকর করতে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের বিবেচনাধীন আছে।