বিদেশের খবর: টানা ছয় দিন আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ।
কাতারের রাজধানী দোহায় এ বৈঠক শেষে তালেবান কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র দাবি করেছে, একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিদেশি সৈন্যরা আফগানিস্তানের মাটি ছেড়ে যাবে—এমন একটি শর্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানতে রাজি হয়েছে।
যদিও বৈঠক শেষে উভয় পক্ষের মধ্য থেকে কোনো ‘যৌথ বিবৃতি’ আসেনি, তবে মার্কিন বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্স এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, তারা আলোচনার একটি খসড়া তালেবানের সূত্রের মাধ্যমে পেয়েছে। সেখানে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়ার শর্তের কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে তালেবান কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, কোনো অবস্থাতেই আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উগ্রপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেবে না।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। সে সময় দেশটি তালেবান সরকার ক্ষমতায় ছিল। তারপর তাদের পতন হয়। টানা ১৭ বছর আফগানিস্তানে যুদ্ধের মধ্যে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন এই আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশটিতে শান্তি ফিরবে কি না, সেই প্রশ্নটিই বেশি আলোচিত হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে বলেছে, দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয় আছে। সেখানেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূতের সঙ্গে আলোচনায় বসে তালেবান কর্তৃপক্ষ। এর আগেও বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে। এর সূত্র ধরে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে ‘যুদ্ধবিরতি’ও হয়েছে। তবে তালেবান কর্তৃপক্ষ আফগান সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে আসছে। কারণ তাদের যুক্তি, আফগান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাপেট’ বা ‘পুতুল সরকার’।
বৈঠক শেষে মার্কিন বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ এক টুইটে বলেছেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখনকার আলোচনা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আমাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।’ এখন আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য কাবুলে যাবেন বলেও জানান।
অন্যদিকে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘আলোচনার ক্ষেত্রে আমাদের ইসলামিক আমিরের (তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা) অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সৈন্যদের সরিয়ে না নেওয়া ছাড়া যেকোনো ধরনের উদ্যোগেরই বাস্তবায়ন অসম্ভব।’
একই সঙ্গে তালেবান মুখপাত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা ‘যুদ্ধবিরতি’ বা আফগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে যুদ্ধবিরতি এবং আফগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে এটি সত্য নয়, এর কোনো ভিত্তি নেই।’