নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনায় ১০ খণ্ড করে সাতক্ষীরার হাবিবুর রহমান সবুজ (২৬) নামে একটি ইটভাটার সরবরাহকারীকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এর পর আটক একজনের ভাড়া বাসা থেকে নিহতের কাটা পা ও মোটরসাইকেল এবং হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও দা উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পৃথক তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক ও উদ্ধার করা হয়।
পরকীয়া-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পাঁচজন এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব-৬-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ মো. নুরুস সালেহীন ইউসুফ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর ফুলবাড়িগেট এলাকায় অবস্থিত কুয়েটের সামনের একটি বাসা থেকে সরদার আসাদুজ্জামান নামে এক যুবককে আটক করা হয়। এর পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নগরীর ৩৪নং ফারাজীপাড়া লেনের হাসনাত মঞ্জিলে তল্লাশি চালানো হয়। এ বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকে সে।
আসাদুজ্জামানের ঘরের খাটের নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো নিহত হাবিবুর রহমানের কাটা পা ও বাথরুমের বালতির ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো মরদেহের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত ছুরি ও দা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত হাবিবুরের ব্যবহূত মোটরসাইকেল আসাদুজ্জামানের ঘরে পাওয়া গেছে।
র্যাব জানায়, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সকালে র্যাবের আরেকটি টিম বটিয়াঘাটা থেকে অনুপম নামে আরেক যুবককে গ্রেফতার করে।
র্যাবের অধিনায়ক জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নিহত হাবিবুর ও গ্রেফতার আসাদুজ্জামান কিছুদিন আগে একসঙ্গে জেল খেটেছে। কারাগারেই তাদের পরিচয় হয়। তিন মাস আগে তারা কারাগার থেকে বের হয়।
র্যাব-৬-এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. শামীম সরকার জানান, পরকীয়া-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মোট পাঁচজন হাবিবুর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। এর মধ্যে দু’জন আটক হয়েছে, অন্য তিনজনকে ধরার চেষ্টা চলছে।
শামীম সরকার জানান, জেলে থাকাকালে নিহত হাবিবুরের সঙ্গে মোস্তফা নামে আরেক হাজতির পরিচয় হয়। এর পর হাবিবুর জেল থেকে বের হওয়ার সময় টাকা খরচ করে তাকে কারামুক্ত করার অনুরোধ জানায় মোস্তফা। কিন্তু হাবিবুর কোনো সহযোগিতা করেনি। এমনকি মোস্তফার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে এবং এক মাস তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। মোস্তফা কারাগার থেকে বেরিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে হাবিবুরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মোস্তফার অনুরোধেই আরও চারজন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
পুলিশ জানায়, নিহত হাবিবুর রহমান সাতক্ষীরা সদরের উমরা এলাকার আবদুল হামিদ সরদারের ছেলে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার এসআই সুজিত মিস্ত্রি জানান, এর আগে লাশের আট খণ্ড উদ্ধার হয়েছিল। সোমবার আরও দুই খণ্ড উদ্ধার হয়েছে। গত ৭ মার্চ সকালে নগরীর শেরেবাংলা রোড থেকে পলিথিনে মোড়ানো হাবিবুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গত ৯ মার্চ খুলনা সদর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।