দেবহাটা ব্যুরো : দেবহাটার পারুলিয়ায় জান্নাতুল মাওয়া মুক্তি (১৫) নামের এক স্কুল ছাত্রীর আতœহত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত স্কুল ছাত্রী পারুলিয়া মাধ্যমিক বাালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী এবং পারুলিয়া বিশ^াস বাড়ি এলাকার মুনছুর আলীর মেয়ে।
জানাগেছে, নিহত স্কুল ছাত্রীর মা ঝর্ণা আক্তার বহেরা এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি কাজ শেষে চাকুরীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এসময় বাড়িতে মুক্তি ও তার ছোট বোন দিপ্তি ছিল। কিন্তু দিপ্তির অগোচরে মুক্তি নিজের ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আতœহত্যা করে। পরে দেবহাটা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্কুলছাত্রী মুক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। একই সময় ঐ স্কুল ছাত্রীর লেখা একটি আড়াই পৃষ্ঠার চিরকুট পাওয়া যায়।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে স্কুল ছাত্রীর লেখা তুলে ধরা হলো- “আমার মৃত্যুর জন্য কেহ দায়ী নহে। সবাই আমাকে ক্ষমা করিয়া দিবেন। প্রত্যেকে নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার কাছে যা কিছু টাকা-পয়সা ছিল তা আমার টেবিলের ওপর রেখে গেলাম। আমার সব কিছু দিপ্তির (ছোট বোন) জন্য রেখে গেলাম। সব কিছু থাকলেও শুধু আমিই পৃথিবীতে থাকলাম না। মা-বাবা তোমাদের কাছে একটা জিনিস দাবী করলাম, সেটা হলো ক্ষমা। তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করো। আর দিপ্তিকে আদর, স্নেহ মায়া-মমতা, নয়নের মনি এবং অল্প শাসনের মাধ্যমে ওকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবা। আমি আসলে খারাপ। দিপ্তি অনেক ভালো মেয়ে। আমার অনুপস্থিতিতে ওর যেন কোন কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখো। কষ্ট কি জিনিস এটা যেন আমার ছোট বোন বুঝতে না পারে। দিপ্তি বড় হয়ে উচ্চ পদের চাকরি করে। তোমরা ওকে সাহায্য করো। আমার জন্য পৃথিবীটা অনেক কঠিন। বেঁচে থাকার কোন দরকার ছোটবেলা থেকেই আমার ছিলোনা। কখনো ভালো মেয়ে হয়ে বাঁচতে পারতাম না। তাইতো চলে গেলাম ঐ পাড়ে। তোমাদের ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। তবুও পারলাম না নিজেকে আটকাতে ঐ মৃত্যুর হাত থেকে। আজ হোক বা কাল চলে তো আমাকে যেতেই হতো। তাই না হয় আজই চলে গেলাম। বাবা-মা তোমাদের আর কষ্ট করে আমাকে দেখতে হবেনা। সবাই ভালো থেকো তোমরা। আমার পাড়া-প্রতিবেশী, স্কুলের শিক্ষক, আমার বান্ধবী আর সকল মানুষকে খুব মিস করছি। তাদের সবার জন্যও কষ্ট হচ্ছে আমার। ঠিকই নিজের ভুল বুঝতে পারলাম, কিন্তু আমার অনেক দেরী হয়ে গেলো। আর বেশী কিছু লিখলাম না। কারণ প্রত্যেকটি কথা লিখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। শেষ বার একটা কথা বলবো যে, মা-বাবা ও বোন তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। আর দিপ্তিকে বলও লক্ষীসোনার মতো পড়াশুনা করতে। আমার আয়ু এই পর্যন্তই ছিলো। আমার মৃত্যুর সময়- সকাল ১০.৪৫। জান্নাতুল মাওয়া মুক্তি।”
তবে আতœহত্যার ঘটনায় এলাকায় ধৃমজাল সৃষ্টি হয়েছে। কেউ ধারনা করছেন তার পিতা-মাতার উপর অভিমান করে আতœহত্যা করেছে। আবার কেউ মরে করছেন প্রেম ঘটিত কিংবা অন্য কোন কারণ হতে পারে।
এবিষয়ে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিহত স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
পারুলিয়ায় ওড়না পেঁচিয়ে স্কুল ছাত্রীর আতহত্যা
পূর্ববর্তী পোস্ট