দেশের খবর: রূপ-যৌবণকে পুঁজি করে অভিনব কায়দায় ফাঁদে ফেলে বাসা বাড়ি হতে অর্থ ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া একটি প্রতারক চক্রের দলনেত্রী তানিয়া আক্তার ওরফে তানিসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার হওয়া প্রতারক চক্রের অন্যরা হলেন দুলারী ওরফে আফসানা, কামাল, আসিফ ও রায়হান।
রবিবার (২৬ মে) ডিবি উত্তরের গুলশান জোনাল টিম উত্তরা ৭নং সেক্টরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এ সময় তানিয়ার ব্যাগ থেকে প্রায় ৬ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার এবং দেড় লাখ টাকা ও প্রতারণায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।
দেখতে, পোশাকে আধুনিকতা, পরনে ব্রান্ডের দামি ঘড়ি, অলংকার, জুতা/স্যান্ডেল, চোখে রোদ চশমা, রঙ্গিন বেশে আর হালের ফ্যাশন সব মিলিয়ে এক মোহনীয় উপস্থাপনা। বেশ কয়েক বছর ধরেই এমন চেহারার আড়ালে রমরমা চলছে চুরি। মেয়েটির নাম তানিয়া আক্তার ওরফে তানি ওরফে সাদিয়া ওরফে ডাঃ নওশীন। বয়স ২৫/২৬ হবে। প্রথম দেখায় যে কারওরই চোখ আটকে যায়। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগায় গাজীপুরের মেয়ে তানিয়া। রাজধানীর অভিজাত আবাসিক হোটেল, পার্টি সেন্টারগুলোতে হর হামেশই এমন সাজগোজের নারী চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়; কিন্তু সবার মধ্যে ব্যতিক্রম তানিয়া। কারণ তার উপস্থিতির পিছনে যে রয়েছে ভিন্ন আরেক উদ্দেশ্য। মূল লক্ষ্য হলো বড়লোক কাউকে টাগের্ট করে বাসা পর্যন্ত যাওয়া এবং সুযোগ বুঝে চুরি করে সরে পড়া।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুইটি বাসায় স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ চুরি হয়। এ সংক্রান্তে ভাটারা থানায় দুইটি পৃথক মামলা রুজু হয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও কাজ শুরু করে। পুলিশ হন্যে হয়ে খোঁজে এই চক্রকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দুইটি বাসাতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চুরি করা হয়। প্রথম বাসার বাড়িওয়ালার ছেলের বন্ধুর মাধ্যমে আগে একবার ঐ বাসায় যায় তানিয়া। ঐ সময়েই টাগের্ট করে। এরপর সময় সুযোগ বুঝে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে বাসায় প্রবেশ করে।
প্রথমেই ঐ বাসার বিভিন্ন সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। বাসাতে ঢোকার সময় দারোয়ানকে বলে সে ডাক্তার এবং বাড়িওয়ালা আংকেল এর মেয়ের বান্ধবী। ইন্টারকমে এটা শুনে স্ত্রী হারা বৃদ্ধ আংকেল ঢুকতে দেয় প্রতারক চোরকে। এরপর ভিতরে ঢুকে তানিয়া বৃদ্ধ আংকেলের কাছে আরেক অভিনব কৌশলের আশ্রয় নেয়। বলে যে, সে ওমান থেকে এসেছে, তার কাছে থাকা বেশ কিছু ডলার রাখার মত নিরাপদ জায়গা না থাকায় এখানে এসেছে। প্রথমে রাজি না হলেও এক পর্যায়ে বৃদ্ধ আংকেল রাজি হয়ে খুলে দেয় আলমারি। আর সুযোগ বুঝে তানিয়া নিয়ে নেয় নগদ টাকা ও বৃদ্ধ আংকেল এর মেয়ের রাখা স্বর্নালংকার। দ্বিতীয় বাসাতে ঢোকার সময় তানিয়া আশ্রয় নেয় ভিন্ন আরেক কৌশলের। এবার যোগাযোগ স্থাপন করে হোটেল রেডিসন এর কোন এক পার্টিতে।
সাধারণত চুরি করতে যাওয়ার সময় তানিয়া তার বিশ্বস্ত এক উবার ড্রাইভার কামালকে ফোন করে আগে থেকে জানায়। এরপর আরেক সহযোগী আসিফ ড্রাইভার কামালকে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। তানিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুচর হলো দুলারী ওরফে আফসানা। এই দুলারীই সার্বক্ষণিক ছায়া সঙ্গী হিসেবে থাকে তানিয়ার সাথে। আফসানাও গাজীপুরের মেয়ে। চুরি করে নিয়ে আসা স্বর্ণগুলো বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তানিয়া মূলত কাজে লাগায় এই আফসানাকে।