খেলার খবর: ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যেত পারলো না বিশ্বকাপে! নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে লজ্জার রেকর্ড গড়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে গেছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে। পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেওয়া ১০৬ রানের লক্ষ্য ১৩.৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে পার করে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বিশ্বকাপে টানা ১০ ম্যাচ হেরে আসা পাকিস্তান প্রথম ম্যাচে হয়ে থাকলো বাক্সবন্দী। ক্যারিবিয়ান পেসের কাছে মাথা তুলতে তো পারলোই না বরং টস হেরে ব্যাট করতে নেমে গুটিয়ে যায় ১০৫ রানে। যাদের ওপর ভর করে পাকিস্তান প্রত্যাশার বেলুনটা ফুলিয়েছিলো সেই ব্যাটসম্যানরা পুরোপুরি ছিলেন নখদন্তহীন।
অবশ্য আজকে রান তবু যে ১০০ পেরিয়েছে, তার পুরো কৃতিত্ব ওয়াহাব রিয়াজের। এই ব্যাটসম্যান ১৮ রানের ইনিংস খেলার কারণেই পাকিস্তানের স্কোর অতদূর গিয়েছে। বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জায় হয়তো ডুবতে হয়নি পাকিস্তানকে, তবে এই ধাক্কা কোনোভাবেই প্রত্যাশা ছিল না তাদের। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ৭৪ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জার রেকর্ডটা অক্ষত থাকলেও এবারের ১০৫ রানে গুটিয়ে যাওয়াটা হয়ে থাকলো বিশ্বকাপে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোরের ঘটনা।
টস জিতে ফিল্ডিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। তার সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে খুব একটা সময় নেননি শেলডন কট্রেল। ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই এই পেসার ফেরান ইমাম-উল-হককে। মাত্র ২ রান করে পাকিস্তানি ওপেনার ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক শাই হোপের গ্লাভসে।
ক্যারিবিয়ান পেস আক্রমণে সুবিধা করতে পারেননি টপ অর্ডারের অন্য ব্যাটসম্যানরাও। ফখর জামান ও বাবর আজম খানিক প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেও বর্থ হন। আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকা ফখর দুঃখজনক বোল্ড আউটে ফিরলে বিপদ আরও বাড়ে পাকিস্তানের। আন্দ্রে রাসেলের বল তার হেলমেটে লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। আউট হওয়ার আগে তার রান ১৬ বলে ২২।
রাসেলের উইকেট উৎসব থামেনি। খানির পর এই পেসার তুলে নেন হারিস সোহেলের উইকেট। তার শর্ট ডেলিভারি ৮ রান করা হারিসের ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে শাই হোপের গ্লাভসে। আশা জাগানো বাবরও পারেননি। ফর্মের তুঙ্গে থাকা এই ব্যাটসম্যানের কাছে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও ২২ রান করে ওশানে থমাসের শিকার হয়ে ফেরেন প্যাভিলিয়নে।
৬২ রানে ৪ উইকেট হারানো পাকিস্তান আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দলকে চরম লজ্জায় ডুবিয়ে একে একে মাঠ ছেড়েছেন সরফরাজ আহমেদ (৮), ইমাদ ওয়াসিম (১), শাদাব খান (০), হাসান আলী (১) ও মোহাম্মদ হাফিজ (১৬)।
পাকিস্তানকে লজ্জায় ডোবানোর পথে বল হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওশানে থমাস। এই পেসার ৫.৪ ওভারে মাত্র ২৭ রান দিয়ে পেয়েছেন ৪ উইকেট। জেসন হোল্ডার ৪২ রান খরচায় পেয়েছেন ৩ উইকেট। আন্দ্রে রাসেল তো আরও ভয়ঙ্কর। ৩ ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে তার শিকার ২ উইকেট।
জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে অনায়াসে জয় তুলে নিয়েছে। বিশ্বকাপের আগে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ঝড় তুলে খেলতে থাকা ক্রিস গেইল আজকেও ছিলেন বিধ্বংসী ভঙ্গিমায়। দলকে জয়ের কাছে পৌঁছে দিয়ে ফিরে গেছেন ৩৪ বলে ৫০ রানে। তাকে বিদায় দিয়েছেন আলোচিত পেসার মোহাম্মদ আমির। যার বিশ্বকাপের মূল দলেই জায়গা হচ্ছিলো না শুরুতে তিনি তার গতির যথার্থতা প্রমাণ করেছেন শাই হোপ (১১) ও ড্যারেন ব্রাভোকে শূন্য রানে ফিরিয়ে। ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে কিছুটা রোমাঞ্চও ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাতেও অবশ্য লক্ষ্যচ্যুত করা যায়নি ক্যারিবীয়দের। শেষ দিকে বিধ্বংসী ভঙ্গিতে খেলে দলের জয়ে ভূমিকা রাখেন নিকোলাস পুরান (৩৪) ও হেটমায়ার (৭)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় পায় ১৩.৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে।
ম্যাচসেরা বল হাতে পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দেওয়া ওশানে থমাস।