দেশের খবর: এবার আমসহ কোনো মৌসুমী ফলেই ফরমালিনের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি বিএসটিআই। আমসহ ২৬৫টি মৌসুমী ফলের নমুনা পরীক্ষা করলে কোনো ফলেই ফরমালিন পাওয়া যায়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে বিএসটিআই এই পরীক্ষা চালিয়েছে।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এর এই পরীক্ষার একটি প্রতিবেদনও প্রস্তুত করা হয়েছে হাইকোর্টে দাখিল করার জন্য। আগামী ১৮ জুন হাইকোর্টে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিএসটিআইর আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। তবে এখন পর্যন্ত বিএসটিআইর কোনো প্রতিবেদন পাননি বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২০ মে এক আদেশে ঢাকাসহ সারা দেশে ফলের বাজার ও আড়তে আমসহ কোনো ফল পাকাতে ও সংরক্ষণে যাতে কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করতে না পারে তা তদারকির জন্য মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ দেন। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি), র্যাব মহাপরিচালক, বিএসটিআই চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট পরিচালককে সাত দিনের মধ্যে এই মনিটরিং টিম গঠন করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে আগামী ১৮ জুনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক আবেদনে এ আদেশ দেন আদালত।
এই আদেশ কার্যকর করার বিষয়ে বিএসটিআইর প্রস্তুত করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএসটিআই ৪৮টি মোবাইল কোর্ট/সার্ভিল্যান্স টিমের সাহায্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের খোলাবাজার থেকে ২৬৫টি ফলমূলের নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর তা পরীক্ষা করে। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশে বাজার মনিটরিং করার জন্য র্যাব, জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআইর সমন্বয়ে সারা দেশে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট ও মনিটরিং কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফরমালিন ও কার্বাইডযুক্ত ফল ধরতে ঢাকার আটটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব প্রবেশপথে আমসহ অন্যান্য ফল প্রবেশের সময় তা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ক্ষতিকর কেমিক্যালের উপস্থিতি পেলে জরিমানা করা হয় ব্যবসায়ীদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রমজান মাসে ঢাকার নিউমার্কেট, মালিবাগ, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এলাকায় বিভিন্ন মার্কেট ও সুপারশপ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জেলা শহরে জনসাধারণের উপস্থিতিতেও ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের মাধ্যমে ফরমালিন পরীক্ষা করা হয়েছে। যার কোনোটিতেই ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর যাত্রবাড়ীসহ কয়েকটি আড়তে কার্বাইড দিয়ে অপরিপক্ক আম পাকানোয় বিষয়টির প্রমাণ পাওয়ায় প্রায় ছয় শ মণ আম ধ্বংস করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই এই অভিযানে অংশ নেয়।
এর আগে এইচআরপিবির করা এক রিট আবেদনে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে হাইকোর্ট আম বাগানে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে আমদানি করা ফল-এ রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে স্থল ও সমুদ্র বন্দরসহ সকল আমদানি পয়েন্ট-এ ফল পরীক্ষার ব্যবস্থা (কেমিকেল টেস্টিং ইউনিট) চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফল-এ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া কাঁচা আম পাকাতে কেমিকেলের ব্যবহার বন্ধের জন্য ৬ মাসের মধ্যে একটি গাইডলাইন তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এইচআরপিবির করা আবেদনে হাইকোর্ট নতুন করে আদেশ দেন।