ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল আসছে। চলতি মাসেই আরও বেশ কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপারের মধ্যে রদবদল করা হতে পারে। এছাড়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয়ও আসতে পারে নতুন মুখ। চাকরির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় আগামী আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে এলপিআর-এ যাওয়ার কথা রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার। এ কারণে তার জায়গায় নতুন করে কে হতে পারেন, এ নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর, ডিএমপি ও কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপারের মধ্যে রদবদল করা হয়। প্রভাবশালী হিসেবে খ্যাত কয়েকজন কর্মকর্তার বদলির বিষয়টি নিয়েও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যমসারির কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে আলোচনা। তবে নাম প্রকাশ করে এ বিষয়ে কেউ মন্তব্য করতেও রাজি হননি।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে বদলি ও পদোন্নতি একটি চলমান প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। আইনশৃঙ্খলা সুষ্ঠু রাখতে এবং সাধারণ মানুষকে আরও বেশি পুলিশি সেবা দেওয়া ও প্রশাসনিক কাজের গতি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী মাঝেমধ্যেই এ ধরনের বদলি বা রদবদল করা হয়ে থাকে।’
সূত্র জানায়, আগামী ২২ জুন থেকে সারাদেশের ৬৪ জেলায় ৯ হাজার ৬৮০ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। সাধারণত পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগকর্তা হলেন জেলার পুলিশ সুপার। দীর্ঘদিন ধরেই কনস্টেবল নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের মধ্যে রদবদল করা হতে পারে।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী সপ্তাহেই জেলার পুলিশ সুপারদের মধ্যে আরেকটি বড় ধরনের রদবদল হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, এমন কর্মকর্তাদের সরিয়ে নতুনদের পদায়ন করা হবে। পুলিশের ইমেজ বাড়ানোর জন্য এক্ষেত্রে তুলনামূলক সৎ কর্মকর্তাদের তালিকায় রাখা হয়েছে।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, পুলিশকে আরও বেশি জনবান্ধব ও পুলিশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের যে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ, তা কমিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। একইসঙ্গে আগে অভ্যন্তরীণ বদলি বা পদায়নের জন্য ঘুষ-দুর্নীতির যে অভিযোগ ছিল, তাও শূন্যের কোঠায় আনার চেষ্টা করছেন তিনি।
একটি সূত্র জানায়, এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ২১ জন কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়। অনেক জেলায় টানা কয়েক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসা পুলিশ সুপারদের সরিয়ে এসব জায়গায় নতুন মুখ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১৬ মে পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে একজন অতিরিক্ত আইজি ও পাঁচ জন ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়।
জানা গেছে, নতুন করে রদবদলের একটি প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখায় পাঠানো হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে পেশাদার একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষ হওয়ার পরও অনেক কর্মকর্তার মধ্যে যারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠ-পর্যায়ে পুলিশিং করার সুযোগ পাননি, তাদেরও তালিকায় রাখা হয়েছে। খুবই কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বদলির এই প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও পুলিশের একটি সূত্র জানায়।
ওই সূত্র জানায়, যে সব প্রভাবশালী পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বদলি করা হতে পারে। আগে জেলার পুলিশ সুপার ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বদলি হতে নানারকম তদবির করতে হতো। সাধারণত পুলিশ সুপার থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে কাকে কোথায় বদলি বা পদায়ন হবে, তা তিনি আগে থেকেই অনেকটা জানতেন। তবে, সম্প্রতি বদিল বা রদবদল হওয়া অনেক পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা জানতেনই না তাদের বদলি নির্দেশনা হতে যাচ্ছে। আইজিপি তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তুলনামূলক সৎ কর্মকর্তাদের সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।