নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় পুলিশ সকল আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক রকিব হোসেন মোল্লা এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তবে, গত ৩০ মে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা প্রেসক্লাবের মধ্যে ঢুকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০জন সাংবাদিককে একতরফাভাবে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করার ঘটনাকে আদালতে দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির কথা উল্লেখ করে পুলিশ বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে।
এদিকে, এ ঘটনার ২৭ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো হামলাকারীদের পুলিশ এখনও গ্রেপ্তার করেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্যাতিত সাংবাদিকরা জানান, গত ৩০ মে প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত চার সদস্যের নেতৃত্বে শতাধিক বহিরাগত সন্ত্রাসী রড, হকিস্টিকসহ দেশিয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়।
এতে সভাপতি আবু আহম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহম্মদ বাপ্পি, এড. আবুল কালাম আজাদ, কল্যাণ ব্যাণার্জি, আব্দুল জলিল ও আব্দুল বারীসহ ১০জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই রাতেই ২৪ জনকে আসামী করে সদর থানায় একটি মামলা করেন প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহম্মেদ বাপ্পি।
এদিকে, চার হামলাকারি নিজেদের বাঁচাতে কৌশলে হাসপাতালে ভর্তি হন। একইভাবে হামলাকারীদের পক্ষ থেকে মনিরজ্জামান তুহিন বাদি হয়ে প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জনের নামে একই রাতে থানায় একটি পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন জেনেও পুলিশ গত ২ জুন রাতে ওই মামলা রেকর্ড করেন। বিষয়টি জানতে পেরে গত ৩ জুন দুপুর সোয়া দু’টোর দিকে মনিরুজ্জামান তুহিনের দায়েরকৃত মামলায় সাংবাদিকরা স্বেচ্ছায় কারাবরণের জন্য থানা চত্বরে অবস্থান নেন।
একপর্যায়ে গত ৯ জুনের মধ্যে তুহিনের দায়েরকৃত মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল ও মমতাজ আহম্মেদ বাপ্পির দায়েরকৃত মামলা স্বাভাবিকভাবে চলবে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎ মিশের এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা তাদের অবস্থান প্রত্যাহার করেন।
এদিকে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা কয়েকজন সাক্ষী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রকিব হোসেন মোল্লা তাদের বক্তব্য বিকৃত করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনের উপর বর্বোরচিত হামলার ঘটনা উভয়পক্ষের হাতাহাতির বলে উল্লেখ করেছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জানান, একতরফা নির্যাতনের ঘটনাটি উভয়পক্ষের হাতাহাতির ঘটনা উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মধ্য দিয়ে পুলিশ হামলাকারীদের বাঁচাতে চেয়েছে। গরীবের চাল চুরি করে বিক্রির সময় তাড়া খেয়ে অন্যের ধানের গোলার মধ্য থেকে আটক ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম, বহিরাগত সন্ত্রাসী আাকাশ, তুহিনসহ তাদের সহযোগীদের বাঁচাতে চাইছে। এছাড়া হামলাকারিরা সদর থানা, পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক রকিব হোসেন মোল্লা জানান, ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নয়, উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেই আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।