রাজনীতির খবর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে পবিত্র কোরান খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে ছাত্রলীগ। অনুষ্ঠানের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের পাতা। কিন্তু রীতিমতো ছাত্রশিবিরের মতো পোস্টার তৈরি, জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার না করা ও চিহ্নিত জামায়াতীদের অনুষ্ঠানে অতিথি করা নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। সমালোচনার ঝর বইছে নেতাকর্মীর মাঝে। এ অবস্থায় ছাত্রলীগ এই পোস্টারের বিষয়ে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। ঢাবির মধুর কেন্টিন ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু ভবনে ছেয়ে গেছে পোস্টারে। শীর্ষ নেতারা নিজেদের ফেসবুক পেজেও দিয়েছেন পোস্টারের ছবি। তবে সোমবার সকালে পোস্টার নেতাকর্মীদের নজরে আসার পরই অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
পোস্টারে লেখা আছে ‘পবিত্র কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিলে’ সভাপতিত্ব করবেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, প্রধান অতিথি মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ। কোরান তেলওয়াতে শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী, সাইদুল ইসলাম আসাদ, তাওহীদ বিন আলী লাহোরী, সাইফুল ইসলাম আল হুসাইনী, তরিকুল ইসলাম, সাইফুর রহমান তকী ও তারেক জামিল।
হামদ-নাতে জাগ্রত কবি মুহিব খান, আনিছ আনসারী, হাফেজ এমদাদুল ইসলাম, মামুন আনসারী, কাজি আমিনুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান, এনামুল কবির, সফিউল্লাহ বেলালী, ইসহাক আলমগীর, হাসনাত রায়হান, ইশতিয়াক আহমাদ।
ডাকসুর সদস্য ও ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সদস্য তানভীর হাসান সৈকত তার ফেসবুক ওয়ালে হতাশ হয়ে লিখেছেন, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত, জয় মামা ও তার স্ত্রী নিয়ে টূএই জাগ্রত কবি মুহিব খান। যিনি জামায়াতের সকল প্রোগ্রামে গান পরিবেশন করতেন। তার বাবা আতাউর রহমান খান বিএনপির সাবেক এমপি। তিনি এই প্রোগ্রামের অতিথি!!!! তাহলে এটা কি জামায়াতের প্রোগ্রাম?
মুহিব খানের বাবা আতাউর রহমান খান ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ছিলেন এবং তিনি জয় লাভ করেন কিশোরগঞ্জ সদর থেকে, সদরের সকলেরই এটা জানা। এমন একজন বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এই অনুষ্ঠানে কে বা কারা প্রোভাইড করল?
আওয়ামী লীগ নেত্রী আমেনা কোহিনূর তার ফেসবুক পেজে লিখছেন, “সারাদিন ধরে ছাত্রলীগের একটা প্রোগ্রামের পোস্টার চোখে পড়ছিল। পোস্টার এর অতিথি দের নাম, ডিজাইন ইত্যাদি দেখে বিশ্বাস করা কঠিন মনে হচ্ছিল। এটা ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম হতেই পারে না। অনেক শিবির এবং বিতর্কিত লোকজনের নাম অতিথি তালিকায়। যাক ছাত্রলীগ অফিসিয়ালি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সাধুবাদ জানাই। এবং সেই সাথে ছাত্রলীগকে জড়িয়ে এতো বড় দুঃসাহস কাদের। অতিসত্বর তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানাচ্ছি।”
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আনন্দ সাহা পার্থ লিখেছেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আয়োজনে কোরান খতম, হামদ-নাত পরিবেশনা ও দোয়া মাহফিল প্রোগ্রামে কাদেরকে অতিথি করেছেন, সবাই কি আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক নাকি জামায়াত-বিএনপির লোকজনও আছে? ‘কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিল’-এর অনুষ্ঠান থেকে জামায়াতের এই কুলাঙ্গারকে বাদ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মানিত সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ভাই ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ভাইকে অনুরোধ করছি। ভুল হতেই পারে, শুদ্ধ করতে নিষেধ নেই বা ছিল না কখনই। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক দফতর বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন লিখেন, জাতির পিতারসহ ১৫ আগস্টে কোন শহীদের ছবি ছাড়া ইতিহাস সৃষ্টিকারী পোস্টার।
সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশে লিখেন, মুহিব খান আমাদের জাতির পিতাকে স্বীকার করে না। পিতাকে অস্বীকারকারী যে কেউ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মসূচীতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলে তা সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এবং জাতির পিতার আদর্শের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমার বিশ্বাস, শ্রদ্ধেয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রিয় প্রতিষ্ঠানের আদর্শিক দিকের সুরক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন।
অনুষ্ঠানের পোস্টার ও জামায়াতী কথিত কবি মুহিব খানসহ অন্তত ছয়জন বক্তাকে দেখে ক্ষুব্ধ অনেক অতিথিও। কবি মুহিব খানের দেশ, জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিদ্বেষী কবিতা গান ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেবল তাই নয় এই ব্যক্তির আপত্তি বাংলাদেশ, দেশের পতাকা এমনকি জাতীয় সঙ্গীত, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়েও। জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিদ্বেষী কবিতা গান ছাড়াও দেশ, দেশের পতাকা জাতীয় সঙ্গীত, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে তার লেখা কবিতা জামায়াতীরা পরিবেশন করে তাদের কর্মসূচীতে। অনুষ্ঠানের জন্য অন্য যেসব হাফেজ ও ক্বারীদের নাম দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশকে নিয়েই আপত্তি উঠেছে। ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্রান্ড ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ পবিত্র হজ পালনের জন্য মক্কায় অবস্থান করায় তার মতামত দেয়া সম্ভব হয়নি।