খেলার খবর: লর্ডসে গত ১৪ জুলাই ফাইনালে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে বেন স্টোকস ইংল্যান্ডকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ শিরোপা। একই রূপে তিনি হাজির হলেন অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে। চতুর্থ দিন ব্যাট হাতে তার বীরত্বপূর্ণ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ১ উইকেটে হারিয়ে অ্যাশেজে ১-১ এ সমতা ফেরালো ইংল্যান্ড। অজিদের ৩৫৯ রানের লক্ষ্য তারা ছোঁয় ৯ উইকেটের বিনিময়ে।
২ রানে অপরাজিত থেকে দিন শুরু করেছিলেন স্টোকস। জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে তার পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি ইংল্যান্ডকে স্বস্তিতেই রেখেছিল। কিন্তু তাদের ছাড়াছাড়ি হতেই বিপাকে পড়েছিল স্বাগতিকরা। ২৮৬ রানে ৯ উইকেট হারায় তারা। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন স্টোকস, সঙ্গী ছিলেন জ্যাক লিচ।
একপ্রান্ত ধরে রেখে লিচ স্টোকসকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন শেষ পর্যন্ত। দশম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৬ রানের এই অবিশ্বাস্য জুটিতে শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় ইংলিশরা। স্টোকসের ২১৯ বলে ১১ চার ও ৮ ছয়ে সাজানো ১৩৫ রানের ইনিংসে ইংল্যান্ড চতুর্থ ইনিংসে তাদের রেকর্ড রান তাড়া করতে সফল হয়।
আগের দিন জো ডেনলির সঙ্গে ১২৬ রানে জুটিতে ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে রাখেন জো রুট। স্টোকসের সঙ্গে নতুন সকালে দাঁত কামড়ে ক্রিজে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। রান নেওয়ার তাড়া ছিল না কারও মনে। বরং যতক্ষণ সম্ভব টিকে থাকাই ছিল দুই ব্যাটসম্যানের মূল লক্ষ্য।
কিন্তু ১৮ ওভারের তুমুল প্রতিরোধ গড়া ১৮ রানের এই জুটি ভেঙে দেন নাথান লায়ন। ৭৫ রানে অপরাজিত নামা রুট ঝুলিতে যোগ করেন আর দুটি রান। ২০৫ বলে ৭ চারে সাজানো তার ৭৭ রানের ইনিংস থামে ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ হয়ে।
ইংল্যান্ড তাদের অধিনায়ককে হারালেও জয়ের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখেন স্টোকস আর জনি বেয়ারস্টো। তাদের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি তিন অঙ্কে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। ৩৬ রানে জোশ হ্যাজেলউডের বলে মার্নাস ল্যাবুশ্যাগনের ক্যাচ হন বেয়ারস্টো। ২২.২ ওভারের এই ৮৬ রানের জুটি ভেঙে ব্রেক থ্রু আনে অজিরা।
এরপর ৮ রানের ব্যবধানে জস বাটলার (১) ও ক্রিস ওকস (১) উইকেট হারান। মিডউইকেট থেকে ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত থ্রোতে রান আউট হন বাটলার। হ্যাজেলউডের বলে ওকস শর্ট এক্সট্রা কভারে ম্যাথু ওয়েডের হাতে ধরা পড়েন।
২৬১ রানে ৭ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের আশা তারপরও বাঁচিয়ে রেখেছিলেন স্টোকস। ১৫২ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ফিফটি হাঁকানো এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দলকে লড়াইয়ে রাখেন জোফরা আর্চারকে সঙ্গে নিয়ে। লায়নের ৩৫তম ওভারে পরপর দুটি চার মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন আর্চার। কিন্তু তিন বল পর তার স্লগ সুইপ ডিপ স্কয়ার লেগে হেডের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হয়। বল হাতে নিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পা পড়ার আগেই ঠাণ্ডা মাথায় সামনে ছুড়ে দেন এবং আবার মাঠে ঢুকে ক্যাচ নেন হেড।
৩৩ বলে ৩ চারে আর্চারের ১৫ রানের ইনিংস থামার পর স্টুয়ার্ট ব্রড মাঠে নামেন। দুই বল খেলে জেমস প্যাটিনসনের কাছে এলবিডাব্লিউ হন তিনি। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি ব্রড। শেষ জুটিতে স্টোকসের সঙ্গে লিচকে পেয়ে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু হাল ছাড়েননি বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যাচসেরা খেলোয়াড় স্টোকস। একপ্রান্ত লিচ সামাল দিয়েছেন, আর তিনি খেলেছেন মারমুখী হয়ে। মাত্র ৬.১ ওভারে হাফসেঞ্চুরি করে এই জুটি, যার মধ্যে কোনও রানই ছিল না লিচের। হ্যাজেলউডকে চার মেরে অষ্টম সেঞ্চুরির দেখা পান স্টোকস, ১৮৮ বলে ৮ চার ও ৫ ছয়ে। পরের দুই বলে টানা দুটি ছয় মেরে ম্যাচে আরও উত্তেজনা বাড়ান তিনি।
১১৬ রানে স্টোকস জীবন পেলে আফসোসে পোড়ে অস্ট্রেলিয়া। থার্ড ম্যান অঞ্চলে মার্কাস হ্যারিস তার ক্যাচ ফেলে দেন। জীবন পেয়েও থামেননি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দুই রান হাতে রেখে লিচকে রান আউট করতে গিয়েও ব্যর্থ হন লায়ন। লিচের সঙ্গে ৭৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ইংল্যান্ডকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন স্টোকস। এর মধ্যে কেবল ১ রান করে ভূমিকা রেখেছেন লিচ ১৭ বল খেলে। রানের খাতা খুলে তিনি ইংল্যান্ডের স্কোরে সমতা আনেন। আর জয়সূচক বাউন্ডারি মারেন স্টোকস।
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে হ্যাজেলউড সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন। দুটি পান লায়ন।