নিজস্ব প্রতিনিধি : মামলা তুলে না নেওয়ায় সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত স্কুল ছাত্রী রিমি খাতুন আত্মহনন মামলার আসামীরা তার বাবা জাকির খাঁকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। বুধবার সকাল সাতটার দিকে সাতক্ষীরা সদরের বল্লী আমতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বল্লী গ্রামের ফজিলা খাতুন জানান, তার মেয়ে রিমি খাতুন বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতো। প্রতিবেশী চাচা মাদ্রাসা ছাত্র মহব্বত তাকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিতো। তাতে রাজী না হওয়ায় তারা বাড়িতে না থাকায় কোচিং এর শিক্ষক ঘরের মধ্যে পড়ানোকালিন ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট রাত ৯টার দিকে বাইরের দিক থেকে দরজায় শিকল তুলে দিয়ে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে মহব্বতসহ কয়েকজন বাড়িতে শালিস বসায়। শালিসকারকরা অভিভাবকদের ডেকে এনে তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করে শিক্ষক হাফিজুরকে ছেড়ে দেয়। শালিসে রিমাকে দুশ্চরিত্রা বলে মারপিট করে চরম অপমান করা হয়। একপর্যায়ে রাতেই সে বাড়ির উঠানের আমগাছের ডালে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরদিন সকালে পুলিশ রিমার লাশ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্তে পাঠায়। এ ঘটনায় রিমার ভাই কলেজ ছাত্র রনি বাদি হয়ে মহব্বত, তার বাবা আনছার খাঁ, কালাম দালাল, হাফিজুর রহমান, রেজাউল মাষ্টার, শফিকুল ইসলামসহ আটজনের নামে থানায় মামলা (জিআর-৬৭২/১৭)দায়ের করেন। আসামীরা জেলে থাকাকালিন তাদের স্বজন রাশিদা খাতুন, ডলি, কাশেমসহ কয়েকজন বাদি ও তার পরিবারের স্বজনদের মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিলে রিমার বাবা জাকির খাঁ ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর সদর থানায় ৩১৫ নং সাধারণ ডায়েরী করেন। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক শেখ মোঃ মিরাজ আলী মহব্বত ও আনছার খাঁসহ ছয় জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সম্প্রতি আসামীপক্ষরা সাক্ষীদের প্রভাবিত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে (নারী ও শিশু- ৩৫/১৮) সাক্ষী করায়। ফলে মামলার সকল আসামীরা বেকসুর খালাস পাওয়ার আশায় উল্লাস করতে থাকে। এরপর থেকে তারা নতুন করে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। আগামি ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও ডাক্তার সাক্ষীর জন্য ধার্য দিন।
ফজিলা খাতুন আরো জানান, বুধবার সকালে তারা বল্লী ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের কাছে হুমকির বিষয়ে জানিয়ে স্বামী- স্ত্রী বাড়ি ফিরছিলেন। সকাল সাতটার দিকে তারা বাড়ির পাশে নিজস্ব সাইকেল মিস্ত্রীর দোকানের কাছাকাছি এলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মহব্বত ও তার বাবা আনছার খাঁ লোহার রড দিয়ে তারস্বামী জাকির খাঁ’র মাখা ফাটিয়ে দেয়।মিজানুর রহমান, স্থানীয় মোচড়া গ্রামের হাশেম চৌকিদারের ছেলেসহ তিনি জাকিরকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে তারেকে ধাক্কা মেয়ে চলে যায় হামলাকারিরা। সকাল ৮টার দিকে জাকিরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ তামিমা হাসান জানান, জাকির খাঁ’র মাথা ভারী জিনিস দিয়ে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার অবস্থাআশঙ্কাজনক।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তামোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।