স্বাস্থ্য ও জীবন: দুপুরে পেটপুরে খেয়ে ভাতঘুম। এই দিবানিদ্রা হজমশক্তির বারোটা বাজাতে পারে। কমিয়ে দিতে পারে স্মৃতিশক্তি। বাড়াতে পারে চর্মরোগ, হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা। তাই রোগের প্রকোপ কমাতে রোজকার রুটিন থেকে দিবানিদ্রাকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিলেন যোগ-ন্যাচারোপ্যাথি বিশেষজ্ঞ ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা।
দুপুরে খাওয়ার পরেই হজমের জন্য পরিপাকতন্ত্র কঠোর পরিশ্রম শুরু করে। এ সময় পেটের মধ্যে অ্যাসিডের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। দুপুর বেলা ভরপেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেই পাকস্থলি ঠিকমতো ‘মুভমেন্ট’ করতে না পারায় বুক জ্বালাপোড়া এবং গলা জ্বলার মতো অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়। তাই খাওয়া শেষে না শুয়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন কিংবা বসে থাকুন। এমনই পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
সম্প্রতি দেশজুড়ে পালিত হয় ন্যাচারোপ্যাথি দিবস। পুণের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ন্যাচ্যারোপ্যাথি’-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল যোগা-ন্যাচারোপ্যাথি কাউন্সিল’, পাইকপাড়ার ‘যোগ স্বাস্থ্য মন্দির’, ‘গড়িয়া পার্ক প্রতিশ্রুতি যোগপীঠ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ‘প্রতিশ্রুতি’-র অনুষ্ঠানে দিবানিদ্রার ক্ষতিকর দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন ‘বিবেকানন্দ যোগা অনুসন্ধান সংস্থান’-এর কলকাতা শাখার ডিরেক্টর ডা. অভিজিৎ ঘোষ, ‘সেন্ট্রাল আয়ুর্বেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ড্রাগ ডেভেলপমেন্ট’-এর গবেষক ডা. সুমিত সুর এবং কর্মযোগার প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার সৌরভ সরকার। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, ওজন কমানোর জন্য খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি বেশ উপকারী!
কিন্তু কেন? দেখা যাচ্ছে দুপুরের ভাতঘুমে ওজন বাড়তে থাকে ক্রমশ। স্থূলত্ব থেকে নানা অসুখের জন্ম হয়। হতে পারে হৃদরোগ, স্ট্রোকও। শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠের চিকিৎসক ডা. প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র জানিয়েছেন, দুপুরে যদি কেউ অভ্যাসবশত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন, তবে সময় এসেছে অবিলম্বে তা জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলার। বরং দুপুরে খাওয়ার পর ১৫-২০ মিনিট হাঁটাচলা কিংবা অন্যান্য হালকা ধরনের কাজ সেরে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ডা. তুষার শীল জানিয়েছেন, পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য সাত-আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি। তবে তা কখনওই দিনেরবেলা নয়।
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০টা দেহের সক্রিয় সময়। এই সময় যদি ব্যায়াম করা হয় তবে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, দুপুরের খাবার হল দিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মিল বা খাবার। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমোলে ঠান্ডার প্রকোপ বৃদ্ধি, স্থূলত্ব, গলার রোগ, বমি বমি ভাব দেখা দেয়। বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। হতে পারে চর্মরোগও।
আলোচনায় উঠে এসেছে মহাত্মা গান্ধীর কথা। সারাজীবন কখনওই অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খাননি তিনি। ন্যাচারোপ্যাথি করেই সুস্থ ছিলেন। শরীরের মধ্যেই রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাকে চাঙ্গা রাখলেই হাজারো অসুখ এড়িয়ে যাওয়া যায়। দিবানিদ্রা দুর্বল করে দেয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে। ন্যাচারোপ্যাথি চিকিৎসকরা বলছেন, দুপুরের ঘুম জীবন থেকে বাদ দিয়ে সুস্থ থাকুন। যোগ ন্যাচেরোপ্যাথি চিকিৎসা ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে গোটা রাজ্যে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক হোমিওপ্যাথি কলেজে যোগ ও ন্যাচারোপ্যাথি প্রশিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। শুরু হয়েছে ১ বছরের যোগ-ন্যাচারোপ্যাথি কোর্স।