বিদেশের খবর: এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে ঘুরে ঘুরে খাবার চেয়ে ফিরছে শিশুটি। কিন্তু একবারও নিজের নাম উচ্চারণ করছে না। প্রায় দুই বছর বয়সী শিশুটিকেও কেউ চিনতে পারছে না। উত্তর-পূর্ব দিল্লির শিব বিহারের বাসিন্দা সৌদ আলম জানালেন, ‘মদিনা মসজিদের কাছে কান্নারত অবস্থায় তাকে খুঁজে পাই’।
দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আলমদের বাড়ির দরজাতেও পৌঁছে যায়। সংঘবদ্ধ হামলাকারীরা তাদের ভাড়া বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বসবাসরত অন্য অনেক মুসলমানের মতো আলম আর তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের পরণের কাপড় নিয়েই পালাতে বাধ্য হয়।
পালানোর সময় পরিবারটি দেখতে পায় একটি মসজিদে হামলা চালানো হচ্ছে। তখনই ওই শিশুটিকে একা একা সেখানে কাঁদতে দেখে সৌদ আলম। শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের পরিবারের সঙ্গে তাকে নিয়ে আশ্রয় নেয় কাছের বাবুনগর এলাকার অন্য এক মসজিদে। পরে তাদের আশ্রয় হয় একটি খালি বাড়িতে। চমন পার্কের কাছের বাড়িটির মালিক গৃহহীন বেশ কয়েকটি পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন।
আর পরিবার হারিয়ে ফেলা ওই শিশুটি এখন বেঁচে আছে পথচারীদের দয়ায়। আলম বলেন, ‘তার বাবা-মা কে বা কোথায় আছে কেউ বলতে পারে না। আমরা যদি তাকে সঙ্গে না আনতাম তাহলে হয়তো হামলাকারীরা তাকেও মেরে ফেলতো’।
বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ঘিরে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের উসকানির পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডব শুরু হয়। টানা ছয় দিনের সহিংসতায় নিহত হয় অন্তত ৪৬ জন। এই তাণ্ডবে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে শত শত মানুষ। আশঙ্কা করা হচ্ছে,নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া এই তাণ্ডবের পর নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। তারা মারা গেছে নাকি বেঁচে আছে সেখবরও জানেন না স্বজনেরা।
তাদের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ সজিব। ব্রাহ্মপুরির কলাবাগান গলির ২০ বছরের এই যুবকের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের শেষ দেখা হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর বেলায়। তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে বলে বাড়ির বাইরে বের হয় সে।
ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করা সজিবের মোবাইল ফোন ছিলো না। তার ভাবী গুলফিসা জানান, সজিবের ইলেক্ট্রিশিয়ান বন্ধু অশুর মোবাইলেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। তবে তার অশুর ফোনও বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তার (অশুর) বাড়িও গেছি, কিন্তু তা তালাবদ্ধ। সমস্যার কারণে পরিবারের সঙ্গে হয়তো সে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে’।
সজিবের বড় ভাই মোহাম্মদ শেহজাদ জানান, পরিবারের সদস্যরা আশেপাশের সব এলাকায় খুঁজে দেখেও তাকে পায়নি। তিনি বলেন, ‘যেতে পারে এমন সব জায়গাতে আমরা খুঁজে দেখেছি’। গুলফিসান বলেন, সোমবার রাতে জাফরাবাদের বিক্ষোভে বন্ধুদের সঙ্গে ছিলো সজিব। তিনি বলেন, ‘সমস্যার সময়ে রাতে বাইরে থাকায় পরদিন সকালে আমার শ্বাশুড়ি তাকে বকাবকি করে। তবে সজিব জানায় বিক্ষোভে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছে, মানুষকে চা এগিয়ে দিয়েছে’।
রবিবার সকালে সজিবের সন্ধান পেতে স্থানীয় থানায় ডায়েরি করেছে পরিবারটি।
একই এলাকার আর এক তরুণও গত সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিলো। তবে ১ মার্চ সকালে তাকে পাওয়া যায়। তার এক আত্মীয় জানায় গোন্ডা এলাকা থেকে তাকে তুলে নেয় পুলিশ। তবে পরিবারের সদস্যদের কিছু জানায়নি।
সূত্র:স্ক্রল ইন