দেশের খবর: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সভা-সমাবেশসহ জনসমাগম হয় এমন সব ধরনের অনুষ্ঠান সরকার নিষিদ্ধ করলেও খোদ সরকারি দফতর বা সংস্থায়ই তা মানার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। থেমে নেই তাদের জনসমাগমের কর্মসূচি। প্রতিদিনই কিছু দফতর ও সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে, যেখানে লোকজন উপস্থিত হতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো কোনো কর্মসূচি কাভার করার জন্য উপস্থিত থাকছেন বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকও। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।
বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত করোনাভাইরাসে দেশে রোববার (২২ মার্চ) পর্যন্ত ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দুজন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন পাঁচজন। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গত ১৯ মার্চ সভা-সমাবেশসহ গণজমায়েত বা জনসমাগম হয় এমন কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়।
কিন্তু ওই নির্দেশনা মানার বালাই দেখা যাচ্ছে না সেদিন থেকেই। বিশেষজ্ঞরা এ সংক্রমণরোধে নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলাচলের আহ্বান জানিয়ে এলেও দেশের সরকারি দফতর ও সংস্থার জনসমাগমের কর্মসূচি চলেই আসছে।
রোববার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেলা ১১টায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দুপুর ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার হস্তান্তর অনুষ্ঠান হয়। এতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচিটি কাভারের জন্য সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। একই মন্ত্রণালয় শনিবারও (২১ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ অনুষ্ঠান করে।
রোববার দুপুরে সমসাময়িক বিষয়াবলি নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার বিকেল ৩টায় শ্রম ভবনে শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। সেখানে সাংবাদিকদেরও ডাকা হয়।
একই দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের বিপুল উপস্থিতির কারণে সৃষ্ট গিজগিজে দশা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
আন্তর্জাতিক বন দিবস উপলক্ষে শনিবারই আগারগাঁওয়ে বন ভবনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ও উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার উপস্থিত ছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) এখন এক হাজারের মতো কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সোমবার (২৩ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বাণিজ্য সহায়ক পরামর্শক কমিটির সপ্তম সভায় সভাপতিত্ব করবেন। এটি কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
যদিও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে করার চিন্তা-ভাবনা করছেন। হয়তো অল্প কিছুদিনের মধ্যে এটা করা সম্ভব হবে।
যেমন- করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য ও নির্দেশনা দ্রুত বিনিময় এবং যোগাযোগ সহজ করার জন্য কোভিড-১৯ নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ভিডিও বার্তায় ব্রিফিং করার নতুন পদ্ধতি তৈরির চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
রোববার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে সংস্থাপ্রধানদের নির্দেশ দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। করোনাসহ অন্যান্য জরুরি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে।
এ পরিস্থিতিতে বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘মিটিংয়ে খুব বেশি লোক থাকবে না, ৩৫ জন থাকবেন। আমরা চেষ্টা করব নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে যেন সবাই বসতে পারেন। এ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তো আমাদের কাজ করতে হবে। যতটুকু করা যায়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কতজন আসবেন মিটিংয়ে তাও তো জানি না।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম হঠাৎ বেড়ে গেল, আবার পড়ে গেল। সবদিকেই সমস্যা। আমাদের জনগণকে কিছু মেসেজ দেয়ার আছে। মিটিংয়ের পর ফলাফলটা জানানোর জন্য সাংবাদিকদের বলা হয়েছে।’