কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাসনদের স্বীকৃতি নিয়ে নানা ধরনের রটনা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখানে কার সঙ্গে কার সন্ধি হয়ে গেলো, চুক্তি হয়ে গেলো, এমন নানা ধরনের কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কোনও সুযোগ নেই। হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনও চুক্তি হয়নি। চুক্তির প্রশ্নই ওঠে না।’ মঙ্গলবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।
কওমি মাদ্রাসার প্রসঙ্গে টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসার অবদান রয়েছে, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। দেওবন্দ কওমি মাদ্রাসা, প্রথম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যারা প্রথম শুরু করেন, এই দেওবন্দ মাদ্রাসা তাদের হাতে তৈরি। সেই মাদ্রাসার যে কারিকুলাম, তা ভারত কিন্তু গ্রহণ করেছে। ভারতে খবর নিলে দেখতে পাবেন, কলকাতায় যে মাদ্রাসাগুলো রয়েছে, সেখানে মুসলমান-হিন্দু সবাই পড়াশোনা করে। প্রায় ৪০ শতাংশ হিন্দু শিক্ষার্থী আছে, এ রকম মাদ্রাসাও সেখানে আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাটা ছয়টি বোর্ডে বিভক্ত। তাদের কারিকুলাম আলাদা। তারা যে কী পড়াশোনা করাচ্ছেন, সেখানে কী শিক্ষা হচ্ছে, তার কোনও খবর কেউ কখনও রাখেনি। তারা সেখানে আরবি শেখান, ফার্সি শেখান, উর্দু শেখান। আবার অনেক মাদ্রাসা রয়েছে, সেখানে কম্পিউটারসহ সব কিছু শেখান। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে ৭৫ হাজার কওমি মাদ্রাসায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাদের কারিকুলাম কী, তারা কী শিখছেন, সঠিকভাবে কেউ বলতেই পারে না।’
কওমি শিক্ষার বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তারা কোনও কাজ পান না, চাকরি পান না। তাদের শিক্ষার কোনও মূল্য নেই। তারা দেশে কাজ পান না, বিদেশে পান। তারা কোনও কিছু করে খেতে পারে না। এই ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর জীবনটা কি আমরা ভাসিয়ে দেব? তারা কী এদেশের নাগরিক নয়? তাদের জীবনের কী কোনও মূল্য নেই? তাদের কি আমরা অন্ধকারে ঠেলে রেখে দেব? তাদের কি আমরা আলোর পথ দেখাব না? তাদের কি মূল ধারায় নিয়ে আসব না? তারা যে কারিকুলামে শিক্ষা গ্রহণ করুক, যেন তারা যেন জীবিকার সুযোগ পান, নাগরিক হিসেবে তাদের যে অধিকার আছে, সেটা আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। সেই জায়গায়টাই আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এই উদ্যোগ বহু আগে থেকেই নিয়েছিলাম যে, তাদের কারিকুলামটা ঠিক করে দেওয়া, তাদের শিক্ষাটা যেন মানসম্মত হয়, তারা যেন সঠিক পথে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং এই শিক্ষার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যেন হয়। এই শিক্ষা নিয়ে যেন তারা চাকরি করতে পারে। জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।’
এ বিষয়ে সরকার আগেই উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন প্রতিটি মাদ্রাসার নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে আমি বসি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ওপরই দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাদের ওপরই কারিকুলাম ঠিক করার দায়িত্ব দিয়ে আমি একটি কমিটিও করে দেই। তারপর কিছু আলেমকে নিয়ে একটি কমিশন গঠন করি। তাদের দায়িত্ব ছিল একটা জায়গায় বসে একটা সমঝোতায় আসা। তাদের সনদ দেওয়ার জন্য আমরা ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ও করে দিয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা সনদটা পেতে পারেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর ৬টি কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের সবাই এক হয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা তাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি এবং নীতিগতভাবে তারা একটি সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, কারিকুলামটা তারা গ্রহণ করবেন। এরপর আমরা সনদের ঘোষণা দিয়েছি। সেই সঙ্গে কারিকুলাম ঠিক করার জন্য একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছি। তারা এখন বসে সমস্ত কারিকুলাম ঠিক করবেন। দেওবন্দের মূল কারিকুলামটা যেমনি তারা গ্রহণ করবেন, তার বাইরেও কী কী করবেন, তারা তা বসে ঠিক করবেন। তারা যেন অন্ধকারে হারিয়ে না যান, তার জন্য আমরা এটা করছি।’
এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন কথায় কথায় তো সবাই ইনক্লুসিভ ইনক্লুসিভ শব্দটির কথা বলেন, তা এই কওমি মাদ্রাসার ১৪ লাখ শিক্ষার্থী যে বাইরে পড়েছিল। তাদের আমরা এই ইনক্লুসিভ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আনতে চাই। আমরা জাতীয় সমস্ত কারিকুলামের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করতে যাচ্ছি। জাতীয়ভাবে উন্নত জীবিকার জন্যই এটা করা হয়েছে।