জি.এম আবুল হোসাইন : প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকা। এসব প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে যুগের পর যুগ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের জমিদার বাড়ি জোড়া শিব মন্দির দুটি। মন্দিরের গায়ে লেখা পোড়া মাটির ফলক থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ২ শত ১১ বছর আগে ১লা বৈশাখ ১২২০ খ্রিস্টাব্দে জমিদার ফকির চাঁদ ঘোষ প্রজাদের পূজা অর্চনা সুবিধার্থে মন্দির দু’টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১ একর ৩১ শতক জমিতে ভক্তবৃন্দের স্নান করার জন্য একটি বিশাল দিঘি নির্মাণ করেন। দিঘির উত্তর পাড়ে পাশাপাশি অবস্থিত মন্দির দুটি। মন্দিরের গায়ে খুব সুন্দর টেরাকোটা কাজ রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের সহজেই আকৃষ্ট করে। ১৯৪৭ সালে এখানে বসবাসরত তৎকালীন জমিদার কালীপদ ঘোষ সহ অন্যান্য হিন্দুরা ভারতে চলে যায়। এরপর থেকে মন্দির দুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। দীর্ঘ দিনের পুরাতন এ মন্দিরটি ১৪১৯ খ্রিষ্টাব্দে ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত ভৈরব রায়ের ছেলে মনোরঞ্জন রায়ের উদ্যোগে প্রথম সংস্কার শুরু হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি মনোরঞ্জন রায় দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা’কে জানান, ৭১ বছর পর ১৪২০ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে চৈত্র এমন্দিরে পুনরায় পূজা অর্চনা শুরু হয়। প্রায় ৪ বছর আগে সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগীতায় দিঘির উত্তর পাড়ে শান দেওয়া হয়। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবু কার্তিক চন্দ্র দাশ বলেন, ঐতিহ্যবাহী মন্দির দুটির সংস্কার বা উন্নয়নকল্পে সরকারি সহযোগীতা প্রয়োজন। ১৪২২ সালের ৩১শে বৈশাখ প্রতœতাত্ত্বিক বিভাগের উদ্যোগে নাম সর্বস্ব একটি সাইন বোর্ড ছাড়া আর কোন সংস্কার বা উন্নয়ন হয় নি। তিনি আরো বলেন, মন্দির দুটির ছাদ ফেটে গেছে। ছাদ এবং দেয়াল থেকে ছোট ছোট অংশ ভেঙে পড়ছে। এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শরিফুজ্জামান ময়না বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে দিঘির উত্তর পাড়ে শান তৈরি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরিষদের পক্ষ থেকে আরো উন্নয়নমূলক কাজের উদ্যোগ নেয়া হবে। স্থানীয় ওয়ার্ড আ’লীগের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ বেতারের নাট্যকার ও কবি ডা. মো. সামছুজ্জামান বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মন্দির দুটির সৌন্দর্য বিলুপ্ত হচ্ছে। অতি শিঘ্রই স্থানীয় সরকার ও প্রতœতাত্ত্বিক বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ঝাউডাঙ্গার ছয়ঘরিয়াসহ সাতক্ষীরার এসব প্রাচীন নিদর্শন গুলো রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।